মো: মনিরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া:>>>
আলীকুল সম্রাট হজরতুল আল্লামা শাহ আব্দুল মালেক মুহিউদ্দিন আল-কুতুবী (রাহঃ), আজমী, বাবাজান কেলার ২০তম বার্ষিক ফাতিহা ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের
কুতুবদিয়ায় কুতুব শরীফ দরবারে অনুষ্ঠিত হবে। এই জন্য হুজুরের দেশ- বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেক, ভক্ত ও সাধারণ জনগণের জন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে- খতমে কোরআন, হেফজ প্রতিযোগিতা, প্রতিযোগিদের পুরস্কার বিতরণ, জিয়ারত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, জিকির ও আখেরী মোনাজাতে, তবরুকের ব্যবস্থা, অবস্থাকারীদের জন্য করা হয়েছে জেলা-উপজেলা ভিত্তিক আলাদা আলাদা প্যান্ডেল। হযরত শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী মুহিউদ্দিন (রাহ:) বাবাজান কেবলা মরহুম মাওঃ মিয়াজান সিকদারের চতুর্থ সন্তান ধমসের আলি (হাফেজ শামসুদ্দিন) (রাঃ) ও মাওলানা মঈন উদ্দিন এর তৃতীয় কন্যা আল্লেমা বদিউাজ্জামান উভয়ের সংসারে বাংলা মাস শ্রাবনের প্রথম জুমাবার মোতাবেক ২১ জুলাই ১৯১১ ঈসায়ী এ মহান পুরুষের জন্ম গ্রহণ করেন। হুজুর শৈশব কাল থেকেই ইবাদতের প্রতি মনোযোগি ছিলেন। হুজুরের শিক্ষা জীবন ঃ হজরত শাহ আব্দুল মালেক মুহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাহ:) সিকদার পাড়া শাহী জামে মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদরাসায় ফোরকানিয়ায়, পূর্ব ধূরুং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি, ধূরুং ছমদিয়া আলিম মাদরাসায় দাখিল, দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা (চট্টগ্রাম) আলিম ও ফাজিল, দারুল উলুম দেওবন (ভারত) মাদরাসায় কামিল পাশ করেন। শিক্ষাগতা ও আত্নপ্রকাশ ঃ কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী ইউনিয়নের হামিদিয়া শামসুন উলুম মাদরাসায় হুজুর শিক্ষাগতা করতেন এবং সেখানে একটি বাক্যের অর্থ ও ব্যাখ্যা (তরজুমা) করতে গিয়ে হুজুরের আত্মপ্রকাশ ঘঠে। দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় দরস দেন। হুজুরের তিন পরিবার। তাদের মধ্যে ১ম পরিবার হারেছা বেগম, হাতিবর পাড়া, চনুয়া, বাশঁখালী। ২য় পরিবার ফাতেমা বেগম, বৈদ্যর পাড়া, দক্ষিণ ধূরুং, কুতুবদিয়া। ৩য় পরিবার গোলছার বেগম, বটতলী, আনোয়ারা। হুজুরের তিন পরিবারে সর্বমোট ১০ জন পুরুষ সন্তান ও ৯ জন মেয়ে সন্তান। তারা হলেন- ১ম পরিবারে ৪জন পুত্র সন্তান ও ৫জন কন্যা সন্তান যথাক্রমে- ১। শাহজাদী মোবাশ্বরা বেগম ২। মরহুম শাহজাদা সিরাজুল ইসলাম ৩। শাহজাদা মনিরুল মন্নান আল মাদানী ৪। আলহাজ্ব শাহজাদা শেখ ফরিদ ৫। শাহজাদা অহিদুল আলম ৬। শাহজাদী মশকুরা বেগম ৭। মৃত শাহজাদী মনোয়ারা বেগম ৮। মৃত শাহজাদী মোবারকা বেগম ৯। শাহজাদী মাছুমা বেগম ২য় পরিবারে ২ জন পুত্র সন্তান ও ১ জন কন্যা সন্তান যথাক্রমে- ১০। শাহজাদী ছলেহা বেগম ১১। মৃত শাহজাদা আব্দুল হালিম ১২। শাহজাদা আব্দুল করিম ৩য় পরিবারে ৪ জন পুত্র সন্তান ও ৩ জন কন্যা সন্তান যথাক্রমে- ১৩। শাহজাদী রশিদা বেগম ১৪। শাহজাদা অতিকুল মিল্লাত ১৫। শাহজাদী হোছাইনা বেগম ১৬। শাহজাদা ছৈয়দুল মিল্লাত ১৭। শাহজাদা জিল্লুল করিম আল মালেকী ১৮। মরহুম শাহজাদা আব্দুল আজিজ ১৯। শাহজাদী মোহছেনা বেগম। সন্তানদের মধ্যে মৃতু যারা বরণ করেন- ১। মৃত শাহজাদা সিরাজুল ইসলাম ২। মৃত শাহজাদী মনোয়ারা বেগম ৩। মৃত শাহজাদা অহিদুল আলম ৪। মৃত শাহজাদী মোবারকা বেগম ৫। মৃত শাহজাদা আব্দুল হালিম ৬। মৃত শাহজাদা আব্দুল আজিজ। কুতুব শরীফ দরবারের যুগ্ন পরিচালক ও ওলামা পরিষদ সভাপতি শাহজাদা জিল্লুল করিম মালেকী আল আল কুতুবী উপরোক্ত তথ্য গুলো নিশ্চিত করে বলেন হুজুরের ওফাতের সময়ে- ২৩ জানুয়ারী ২০০০ ঈসায়ী রোজ রবিবার বহদ্দার হাটের একজন পাগল এস হুজুরের পায়ে দড়ে কদমমোছি/ সালাম করতে গিয়ে দরজার ছৌকটে হুজড় খেয়ে হুজুরের হাতের উপর পাগলের হাতের ছাপ পড়ে হুজুরের ডান হাতের দুই হাড়ের মধ্যে ছোট হাড়টি ভেঙ্গে দুই খন্ডিত হয়ে যায়। তখন সময় দুপুর ১.৩০ মিনিট এই ঘটনা যখন জানাজানি হয়ে যায়। তখন হুজুরের বড় শাহজাদাসহ আরো কয়েকজন শাহজাদা মিলে হুজুরের কাছে চিকিৎসার জন্য অনুমতি আবেদন করেন। হুজুর অনুমতি না দিয়ে বলেন, এটা আল্লাহর তরপ থেকে হয়েছে এবং আল্লাহর তরপ থেকে ভাল হয়ে যাবে। হুজুর আরো বলেন- একটা কলা গাছের বেন্টিজ করে দাও। এতে হুজুরের পুত্র শাহজাদাবৃন্দ ও ভক্তগণের মনমত না হওয়ায় একপ্রকার জোরপূর্বক হুজুরকে চট্টগ্রামস্থ খুলশি থানার অর্ন্তগত হলিক খ্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ৯ দিন যাবৎ নামমাত্র চিকিৎসা করা হয়। হাসপাতালে চিকৎসা থাকাকালীন অবস্থায় অসংখ্য ভক্ত মুরিদরা দেখতে যায়। ভক্ত মুরিদের ভিড় এতই ভেড়ে যাওয়াতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন অন্যান্য রোগিদের অসুবিধা হওয়ায় হুজুরকে আর্জি পেশ করা হলো। তখন মালেক শাহ হুজুর বললেন আমি আমার মুরিদ সিরাজুল ইসলাম সেরু মিয়ার বাড়ী যাব। তখন হুজুরের হুকুমে চট্টগ্রাম শহরের মাঝির ঘাটস্থ সেরু মিয়ার বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ১ জানুয়ারী ২০০০ ইং তারিখে মঙ্গলবার হইতে ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০০০ সাল তারিখ শনিবার পর্যন্ত সেরু মিয়ার বাড়িতে অবস্থান করেন। অবস্থানকালে বিগত ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০০০ ঈসায়ী তারিখ আনুমানিক ১০.৩৫ মিনিটের সময় হুজুর কেবলা আল্লাহর মহান দিদারে শামীল হন (ইন্নালিল্লাহে -------রাজিউন) । হুজুরের ওফাতের দিন শাহজাদাগণ বিজলিত হয়ে জানাজার নামায ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০০০ ইং তারিখে বাদে আছর চট্টগ্রাম কলেজিয়েট মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত করা হয়। কিন্তু ভক্তদের ভিড় ভেড়ে যাওয়াতে সিদ্ধান্ত ভিড় পরিবর্তন করা হয়। তৎকালীন সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দু ছমদ আযাদ, আ.খ.ম জাহাঙ্গীর , ও এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধূরী ২০/০২/২০০০ রবিবার, চট্টগ্রাম প্র্যাড ময়দানে জানাজার নামজের সময়সূচী ঠিক করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০/০২/২০০০ ইং তারিখে আনুমানিক ৩০ লক্ষ মুসল্লির উপস্থিতিতে ১ম জানাজার নামায ৯.৫৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। পরপরই একই মাঠ ২য় দপা জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ফরিঙ্গা বাজার ঘাট নৌ-স্টীমার যোগে কুতুবদিয়া নিয়ে আসা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারী ২০০০ বাদে আছর আনুমানিক ১৫ লক্ষ মুসল্লির উপস্থিতিতে কুতুব শরীফ দরবার প্রাঙ্গনে ৩য় জানাজার নামায অনুষ্ঠিত হয়। এবং মাগরিবের নামাজ শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। ওয়াতের সময় হুজুরের বয়স ৯১ বছর ছিল।
কুতুবদিয়ার কেমিষ্ট এন্ড ডক্টরস এসোসিয়েশন সভাপতি ডাঃ আনছার মোহাম্মদ জানে আলম জানান- হযরত শাহ আব্দুল মালেক মুহিউদ্দিন আল-কুতুবী (রাহঃ) এর ২০তম বার্ষিক ওরস ও ফাতিহা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমরা দুই দিন ফ্রি চিকিৎসা ও ঔষধ দিয়ে অসুস্থ রোগিদের সেবা প্রদান করা হবে বলে জানান।
এন্তেজামিয়া কমিটির মহা-সচিব আলহাজ্ব মোহাম্মদ শরীফ জানান- অলীকুল সম্্রাট হযরত শাহ আব্দুল মালেক মুহিউদ্দিন আল-কুতুবী (রাহঃ) এর ২০তম বার্ষিক ওরস ও ফাতিহা আগামী ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারী দুই দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত ফাতিহা শরীফে সর্বস্থরের লক্ষ্য লক্ষ্য হুজুরের আশেক ও ভক্তবৃন্দ আসেন। তাদের সুবিধার জন্য নেওয়া হয়েছে সকল ধরণের প্রস্তুতি। তার মধ্যে মানুষ অবস্থানের জন্য জেলা-উপজেলা ও মহানগর ভিত্তিক ৫২টি প্যান্ডেল এবং তাবরুকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুতুবদিয়ার মানুষের জন্যও আলাদা প্যান্ডেল করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও সুন্দর ভাবে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হচ্ছে। দু’দিন ব্যাপি বার্ষিক ওরস্ ও ফাতিহা শরীফ উপলক্ষে দরবারে বিশাল জনসমুদ্র সৃষ্টি হয়। ফলে মহিলাদের দরবার ঘাটে যাওয়া-আসায়, ঘাট পারাপারে, থাকা-খাওয়া, বিশ্রামসহ সকল নানাবিধ অসুবিধার কারণে এবং ইজ্জত রক্ষার্থে আগামী ১৮,১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারী ৩দিন মহিলা না আসার এবং না আনার সম্মাণিত দরবারী ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ জানান।
কুতুব শরীফ দরবার পরিচালক আলহাজ্ব শাহজাদা শেখ ফরিদ আল কুতুবী বলেন- আপনারা অলীকুল সম্্রাট হযরত শাহ আব্দুল মালেক মুহিউদ্দিন আল-কুতুবী (রাহঃ) এর ২০তম বার্ষিক ওরস ফাতিহা শরীফে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যোগদান করতঃ আধ্যাত্মিক এই মহা মিলন কেন্দ্রে খতমে কোরআন, জিয়ারত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, জিকির ও আখেরী মোনাজাতে শরীক হইয়া গাউছে মুখতার হজরত বাবাজান কেবলার রূহানী ফয়েজ হাসিল করার আহবান জানান।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment