একুশে মিডিয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক:>>>
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের পথে আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকের দুই মেয়র প্রার্থী- উত্তরে আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস অনানুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১০৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৯টিতে আতিক পেয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৪ ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৫ ভোট।
আর ১১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৭৯টিতে তাপস পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩২ এবং বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৫ ভোট। অর্থাৎ আতিক ৮৮ হাজার ৮৮৯ এবং তাপস ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৭ ভোটে এগিয়ে ছিলেন।
এর আগে শনিবার সকাল আটটা থেকে দুই সিটিতে একযোগে চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। কেন্দ্র দখল, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা, এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বহুল প্রত্যাশিত ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এবার প্রথমবারের মতো দুই সিটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ইভিএমে ভোট দিতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েন ভোটাররা। অনেকে কেন্দ্রের সব কটি বুথে গিয়েও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারেননি।
আবার কোথাও কোথাও আঙুলে ছাপ দেয়ার পর নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অনেক ভোটার অভিযোগ করেন। দেশীয় পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি বিদেশি অনেক কূটনীতিকও ভোট পর্যবেক্ষণ করেন। বিএনপিসহ অন্যান্য দল নানা অভিযোগ করলেও ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। ভোট উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে রাতে দুই সিটির ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় হরতালের ঘোষণা দেয় বিএনপি। অন্যদিকে এ হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ ছাড়া দুই সিটিতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ভোট। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেই এ সংঘর্ষ হয়। এতে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অনেকেই আহত হন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন গণমাধ্যমকর্মীরাও।
মোহাম্মদপুরে একটি কেন্দ্রে ছবি তুলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর সমর্থকদের হামলায় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। সুমন নামে একজনের অবস্থা গুরুতর। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভোটের পর বিকালে নয়াপল্টনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সব মিলিয়ে ৭৫০ জন প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে ৬ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দুই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮ জন ও নারী ভোটার ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। ঢাকার দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র ও ১৪ হাজার ৪৪৫টি ভোটকক্ষ ছিল।
ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। বিএনপির দাবি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মারধর করে তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এক কথায় নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, মারধর তো পরের কথা বিএনপির এজেন্টরা কেন্দ্রেই আসেনি। বিএনপি যে অভিযোগ করেছে তা অমূলক ও মিথ্যা। শত বছরের ‘সেরা’ নির্বাচন হয়েছে এটি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সব সংস্থা ও নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
এর আগে বিএনপির প্রতিনিধি দল ভোটকেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেয়া, জালভোট দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবলিত চিঠি সিইসিকে দেন। এদিকে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রার্থীরাও ভোটের পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উত্তরে সিপিবির মেয়র প্রার্থী আহম্মদ সাজেদুল হক রুবেল অভিযোগ করেন, ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইসি ব্যর্থ হয়েছে।
দুই সিটির নির্বাচনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, এজেন্ট বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ৪৫টি ঘটনার তথ্য পায় নির্বাচন কমিশনের মনিটরিং সেল। ওই সব ঘটনার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেয়া হলে তারা তাৎক্ষণিক সমাধান করেছেন বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিং ও সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় সেল।
ঢাকা উত্তর : রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল পেয়েছেন ৮০৯৮ ভোট, এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান ১৯৭৯, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল পিডিপির শাহীন খান ১১৩৮ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ ১৫৯৩৫ ভোট।
ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন ও নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। এতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ছিল। ঢাকা দক্ষিণ : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন; এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন ও নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন। এখানে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ছিল।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ৪৭৭২ ভোট, গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন ১০৮৭৩, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ ২০৬০, ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান ২২৫৭৬ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহারানে সুলতান বাহার পেয়েছেন ২৭০০ ভোট।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment