জাহিরুল মিলন, যশোর:>>>
আজ সেই মর্মান্তিক দিন। যেদিন পিকনিক শেষে মুজিবনগর থেকে বাসে করে ফেরার পথে যশোরের চৌগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী। আজ তাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বন্দরনগর বেনাপোলে শোক র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়োজনে এ শোক র্যালি ও সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাক হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর ৮৫/১ শার্শা আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুজ্জামান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আব্দুর রব, যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল ও অহিদুজ্জামান অহিদ, বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বজলুর রহমান, বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক মুকুল , সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন, শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন রাসেল, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন জোয়ার্দার, সাধারন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এসময় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজনের মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে ৯টায় শোক র্যালি, সাড়ে ১০টায় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ অর্পণ এবং পরে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মুজিবনগরে পিকনিক শেষে বাসে করে বাড়ি ফেরার পথে চৌগাছা সড়কে বাস উল্টে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় আরো ১৯ শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ দিন পর মারা যায় আরও তিনজন। সেদিনের সে মৃত্যু কাঁদিয়েছিল বেনাপোলবাসীসহ গোটা দেশের মানুষকে। প্রতিবছর এ দিনটিতে বেনাপোলে শোক র্যালি ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়ে থাকে। স্কুলটির সামনে নিহত ৯ শিক্ষার্থীর স্মরণে দৃষ্টিনন্দন একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছে বেনাপোল পৌরসভা।
এই দিনের কথা স্বরণ করে প্রধান অতিথি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে দীর্ঘ ১১টি বছর ধরে আমি ধূলাবালি আর কাঁদা মাটিকে উপেক্ষা করে নিজ ব্যবসায়ীক সময় বিসর্জন দিয়ে শার্শা উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের মাঠে ময়দানে বসে মায়েদের নিয়ে মা সমাবেশ করেছি। অনুভব করেছি শিক্ষিত জাতি গঠন ছাড়া এদেশেরর উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। তাইতো শিক্ষার বিপ্লব ঘটাতে প্রতিনিয়ত মায়েদের রান্না খাওয়ার সময়ে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনায় ভিক্ষা চেয়েছি। বলেছি, প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বেলে আমাকে “একটি করে” সু-সন্তান দাও। বিনিময়ে আমার সকল ধরনের সহযোগিতা শার্শাবাসীর পাথেয় হয়ে থাকবে। বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিকনিক ট্রাজেডিতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৯ শিশু শিক্ষার্থীর স্মরণে শোক সভায় প্রধাণ অতিথির বক্তব্যের সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে একথা বলেন তিনি।
উক্ত স্মরণ সভায় শেখ আফিল উদ্দিন এমপি আরো বলেন, শার্শাবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম তার সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে সুসন্তানে পরিণত করতে হবে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন সকল মায়েরা-বাবারা। সন্তানকে বলেছিলো তোকে ডাক্তার বানাব, ইঞ্জিনিয়ার বানাব, দেশের বড়ো অফিসার বানাব। কিন্তু অমানিশার এক অন্ধকারে যখন নয়, নয়টি শিশু লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরল তখন কে দেবে তার মাকে শান্তনা? দু’নয়নে কেবল জল। বাবা হতবাক! বুকফাটা আর্তনাদে আঁছড়ে পড়ছে মা। আর কথা বলতে পারেননি সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন। মাঝে মধ্যে ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে উঠলেন আর উপস্থিত হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও মা-বাবাদের কাঁদিয়ে ফেললেন। ঘটনার ৬ বছর অতিবাহিত হলেও এযেন সদ্য শিশু সন্তান হারানোর বেদনায় আবারো শোকের মাতম বয়ে যায় বেনাপোল জুড়ে। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আকাশ বাতাশ তরুলতা। মনের অজান্তে হলেও উপস্থিত প্রত্যেক মানুষের হৃদয় দুমঢ়ে-মুচড়ে ফেটে বের হতে চায় ঢুকরে উঠা কান্নার ঢেউ। যে আঁখিতে এতোদিন লুকিয়ে ছিল জল, তা যেনো বাঁধভাঙ্গা নদীর মতো উপচে বেয়ে পড়তে লাগল। এসময় চশমা খুলে ছোখের কোণা মুছে আধো আধো বোলে শেখ আফিল উদ্দিন এমপি বলেন ক্ষমা করে দিও মা! আমরা পারিনি তোমার আদরের সোনামণি সুরাইয়া, জেবা, মিথিলা, রুনা আক্তার মীম, শান্ত ও সাব্বির হোসেন আঁখিকে বাঁচাতে। তবে, এখন থেকে শার্শা উপজেলার আর একটি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দূর-দূরান্তরে পিকনিকে যাবে না।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment