মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম, চট্টগ্রাম:
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে অনেকে যখন বাড়িতে থাকার কথা চিন্তা করছে, ঠিক তখনই ক্ষুদ্রঋণের কথা মাথায় আসছে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষের।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলি, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় সংখ্যা বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), সমিতি, মাল্টিপারপাস ও সমবায় সমিতি সহ অনেক গ্রাম্য সমিতির ঋণের কিস্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কর্ম বন্ধের কথা মনে হলে ঋণের কিস্তি শোধের চিন্তায় কপালে ভাজ পড়ছে সাধারণ মানুষের।
বাঁশখালী উপজেলার বশির উল্লাহ মিয়াজির বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম একুশে মিডিয়াকে জানান, আমাদের নিজেদের কোনো টাকা নেই। এনজিও সংস্থা ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে দোকান করি। কারোনা ভাইরাস আতঙ্কে চলমান যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, কিস্তি পরিশোধ করা তো দূরের কথা নিজের সংসার চলানো ঝটিল হয়ে পড়েছে।
বাংলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মহিউদ্দীন একুশে মিডিয়াকে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারের যে, নিদের্শ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তা মেনে চলার খুব ঝটিল! ঘরে থাকতে হলে তো দোকান বা ব্যবসা বন্ধ রেখে ঘরে বসে থাকতে হবে! তখন ঋণের কিস্তি শোধ করবো কীভাবে?
রিক্সা চালাক জয়নাল, কবির ও মানিক একুশে মিডিয়াকে বলেন, আমাদের তো কাজ করলে পেটে ভাত জোটে, না করলে জেটে না। আমরা কীভাবে ঘরে থাকবো? এর ওপর কমবেশি কিস্তি আছে সবার।
সরকারের কাছে অনুরোধ ভাইরাস যতদিন না যায় ততদিন অন্তত আমাদের কিস্তিটা বন্ধ রাখুন। একদিকে করোনার আতঙ্ক তার ওপর কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়বো। আমাদের জন্য একটু লিখুন সাংবাদিক ভাই।
খাসমহল চৌমুহনী এলাকার চা বিক্রেতা মো. শাহাজান বলেন, দুপুরের দিকে প্রতিদিন দোকানে ভিড় থাকে। কয় দিন ধরে রাস্তায় মানুষ খুব কম। তাই বিক্রিও কমে এসেছে। এই দোকানের আয় থেকে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। পাশাপাশি দোকান চালানোর জন্য দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। সেখানে একটিতে সপ্তাহে ১ হাজারর ৭শ টাকা ও অপরটিতে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়, এমন অবস্থা হলে কি করবো জানি না!
বাঁশখালী পৌরসভার বাসিন্দা আজিজ আহমদ একুশে মিডিয়াকে বলেন, এই সংকটের সময়ে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি উত্তোলন স্থগিত করা হোক। না হয় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আরও অতিষ্ঠ হবে প্রান্তিক জনজীবন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাঠ পর্যায়ের এনজিও কর্মী জানান, ঋণ বিতরণ করার পর উত্তোলন করার দায়িত্ব তাদের। কেউ কিস্তি না দিলে পকেট থেকে অফিসকে দিতে হয়। আমাদেরও চাকরি বাঁচাতে হবে। সরকার কিস্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। চাকরি করতে হলে অফিস যা বলবে আমাদেরও তো তাই করতে হবে।
বাংলাদেশে এ কারোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গেলো ৮ মার্চ। এরপর দিনে দিনে এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে।
সবশেষ হিসাবে দেশে এখন পর্যন্ত ২৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, আরা মারা গেছেন ১জন। করোনার বিস্তার রোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment