এম এ হাসান, কুমিল্লা:
কুমিল্লার লাকসামে মুরগীর খামারকে কেন্দ্র করে ইউনুছ মিয়া নামের ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার পৌর এলাকার সাতবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ইউনুছ মিয়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে লাকসাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সুষ্ঠু বিচার না হলে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে সাতবাড়িয়া রেলগেইট সংলগ্ন এলাকায় মৃত আলী মিয়ার ছেলে শাহ আলমের মালিকানাধীন মুরগীর খামারের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তার উপর কিছু মৃত মুরগী পড়ে থাকতে দেখে মাটিতে পুঁতে ফেলার অনুরোধ করেন গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলমের ছেলে শাকিল ইউনুছ মিয়াকে গালমন্দ শুরু করে। এক পর্যায়ে খামারে থাকা বেলচা দিয়ে ইউনুছ মিয়াকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে শাকিল। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। বাম বাহুর হাঁড় ভেঙ্গে যায়।
খবর পেয়ে ইউনুছ মিয়ার পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি মারধর করে শাহ আলম, তার ছেলে শাকিল, সৈকত ও শাওন। আহত ইউনুছ মিয়াকে তাৎক্ষণিক লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।অবস্থা আশংকা জনক দেখে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা।
বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওইদিন বিকেলে ইউনুছ মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে লাকসাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ঘটনার পর উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো গ্রাম জুড়ে। রবিবার সকালে সাতবাড়িয়া রেলগেইট সংলগ্ন এলাকায় সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।
এতে স্থানীয় সমাজসেবক আনু মিয়া, রফিকুল ইসলাম, মহিন উদ্দিন, আব্দুল জলিল, আব্দুর রউফ, জহিরুল ইসলাম বাহার, আবু ছায়েদ, মিজানুর রহমান, সর্দার মমিন আলী, আইয়ুব আলী ও ফজলুল হক সহ গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ইউনুছ মিয়ার উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, শাহ আলমের মুরগীর খামারের তীব্র দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামের বাসিন্দাদের।
যত্রতত্র খামারের বর্জ্য, মুরগির বিষ্ঠা ও মৃত মুরগি ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামবাসী। বাড়ির ভিতরে এবং রাস্তার পাশে পৃথক পৃথক খামারের তীব্র দুর্গন্ধে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হচ্ছে। মৃত মুরগী ও মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াদাওয়া করা যায় না। ঘুমাতেও কষ্ট হয়।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্রান্তিকালে পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগ লাঘবে তারা দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা আরো বলেন, এর আগেও শাহ আলম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একাধিকবার গ্রামের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে।
প্রায় সময় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়ায় জড়িয়ে তার ছেলেরা গ্রামের মধ্যে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া চালায়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানো, যত্রতত্র বর্জ্য, বিষ্ঠা ও মৃত মুরগি ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগটি অস্বীকার করেন খামারের মালিক শাহ আলম। ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ইউনুছ মিয়ার উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ওইদিন সকালে হঠাৎ ইউনুছ মিয়া ও তার ছেলেরা খামারে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তার ছেলে শাকিলকে আহত করে এবং নগদ টাকা-পয়সা লুটপাট করে।
এ বিষয়ে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘উভয়পক্ষ লিখিত অভিযোগ করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, এ বিষয়ে লাকসাম থানা পুলিশ সোচ্চার রয়েছে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment