মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, চট্টগ্রাম:
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে চট্টগ্রাম নগরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে কমে এসেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। যদিও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আতঙ্কিত হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানানো হয়েছে। এরপরও নির্ভয়ে থাকতে পারছেন না অভিভাবকেরা।
অভিভাবকেরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস যেভাবে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এই মুহূর্তে ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। সরেজমিনে নগরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে অনেকটাই।
বিশেষ করে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম দেখা গেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে। মূলত করোনাভাইরাসের কারণেই উপস্থিতির সংখ্যা কমছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিভাবকেরা ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে আনতে চান না।
অভিভাবকদের মধ্যে কেউ দুইদিন পর কেউ তিন দিন পর স্কুলে তাদের সন্তান নিয়ে আসছেন। প্রায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা মাস্ক পরে বাইরে বের হচ্ছেন। যতটা সম্ভব সর্তকতার সঙ্গেই বাইরে চলাফেরা করছেন। বেশিরভাগ অভিভাবকের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্ধ রাখা উচিত।
জান্নাতুল নামে অপর্ণাচরণ স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে কত মানুষ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্ত তিন জন শনাক্ত হয়েছে শুনেছি।
আতঙ্কের মধ্যে আছি। তাই মেয়েকে নিয়মিত স্কুলে আনছি না। কিন্তু ক্লাস টেস্টের কারণে এখন আনতে হচ্ছে। পরীক্ষা তো বাদ দেওয়া যাবে না। তবে সবচেয়ে ভাল হতো স্কুলগুলো কিছুদিনের জন্য বন্ধ দেওয়া হলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে বাইরের দেশ থেকে কত মানুষ আসা-যাওয়া করছে।
তারা যদি কোনোভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাদের থেকে এই ভাইরাস ছড়াবে না কে বলতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। স্কুল বন্ধ দিলে অন্তত ছেলেমেয়ে নিয়ে নিরাপদে বাসায় থাকা যেতো।’
রুবিনা নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘এই ভাইরাসটি আমাদের জন্য একটি বড় রকমের আতঙ্ক। কারণ এই ভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। আমার ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
যেকোনো রোগ বাচ্চাদের শরীরেই আগে প্রবেশ করে। তাকে নিয়ে বাইরে বের হলেই ভয় লাগে। কিন্তু স্কুলগুলো তো বন্ধ ঘোষণা করছে না। গত দুইদিন স্কুলে নিয়ে আসিনি। কিন্তু লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে আজ নিয়ে এসেছি। কারণ কয়েকদিন পর আবার পরীক্ষা শুরু হবে। অনুপস্থিত থাকলে তো পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়বে। কী করবো বুঝতে পারছি না। স্কুলে না আসলে পড়ার সমস্যা, আবার আসলে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক।’
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া দুই একদিন আগে পত্রিকায় দেখেছি ইতালিফেরত একজন শিক্ষক কোনও পরীক্ষা না করেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। যদি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তো এই ভাইরাস ছড়িয়ে পুরো চট্টগ্রাম শহরে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হবে না।’
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আক্তার বলেন, ‘অন্যান্য স্কুলগুলোতে অনুপস্থিতির হার কমলেও আমাদের স্কুলে উপস্থিতি ঠিক আগের মতোই।
আতঙ্ক তো সবার মধ্যে আছে। তারপরও উপস্থিতি কমেনি। তাছাড়া স্কুল বন্ধ রাখার কোনও নির্দেশ এখনও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসেনি।’
এদিকে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও
গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) মহাপরিচালক বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে এখন যে পরিস্থিতি বিদ্যমান তাতে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পরিস্থিতি হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার
প্রয়োজন হলে তারা আমাদের জানাবেন। অনেক ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত না পাবো ততক্ষণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে না।
একুশে মিডিয়া//এমএসএ
No comments:
Post a Comment