মোঃ মনিরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া (কক্সবাজার):
করোনাভাইরাস মুক্ত রাখতে কুতুবদিয়ায় লকডাউন ও দ্বীপের অসহায় দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর। তিনি খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দ্বীপের অসহায়, দরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। কখনো রাস্তার অলিগলিতে, আবার কখনো মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন। যাতে দ্বীপে মানুষ অনহারে না থাকে এবং বাহিরে ঘুরাফেরা না করে। শুক্রবারেও তিনি বসে নেই। তার সাথে ব্যস্ততা সময় পার করছেন এসিলেন্ড মুহাম্মদ হেলাল চৌধূরী।
ইউএনও জিয়াউল হক মীর, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ধূরুং বাজার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আযাদের কর্মজীবী ও শ্রমিকের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শেষে ছুটে যান দ্বীপের মুরালিয়া গ্রামে। সেখানে রাস্তায় পৃথক পৃথক কিছু রিক্সা চালকে দেখা ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে তাদের সাথে কথা বলেন। তিনি রিক্সা চালকদের করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে বাড়ি থেকে বাহিরে না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
ইউএনও জিয়াউল হক মীর বড়ঘোপ দক্ষিণ মগডেইল রিক্সা চালক ফোরকানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সরকারিভাবে দেওয়া খাদ্য সামগ্রী পেয়েছি। কিন্তু আমার দৈনিক ৮০ টাকা করে ঔষধ খরচ লাগে। ঔষধের টাকা জোগাড় করতে রিক্সা নিয়ে বাহির হলাম। তখন ইউএনও তাকে সাতদিনের ঔষধ খরচ বাবত ৬০০/- প্রদান করে বুঝিয়ে বাড়ি পাটিয়ে দেন। করোনা থেকে মুক্ত থাকতে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বাড়িতে অবস্থান করে এবং বাহির না হয়। ইউএনও আবার অনেক রিক্সা চালক কে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বুজিয়ে বাড়ি পাটাতে দেখা যায়। তার দিনরাত এই পরিশ্রম চোখে পড়ার মত। দ্বীপ জুড়ে রয়েছে ইউএনও জিয়াউল হক মীরের আলোচনা। দ্বীপবাসী তার দীর্ঘায়ু কল্যাণ কামনা করেন। সরকারের কাছে সবসময় দ্বীপে এই রকম ভাল ইউএনও প্রত্যাশা করেন।
রিক্সা চালকে ঔষধ খরচ ও দ্বীপে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে ইউএনও জিয়াউল হক মীর এর সাথে উপস্থিত ছিলেন এসিল্যান্ড মুহাম্মদ হেলাল চৌধূরী, সাংবাদিক মোঃ মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক আব্বাস উদ্দিন, সাংবাদিক আবুল কাশেম সহ স্ব স্ব এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি।
এদিকে মানুষ শূন্য বাজারে যাত্রীর অপেক্ষায় দিন মজুর রিক্সাচালক ও ভ্যান চালক। বাজার থাকলেও নেই ক্রেতা-বিক্রেতা, সম্প্রতি সংক্রামক করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য সরকার দেশের সকল হাট-বাজার, দোকানপাট সাময়িক বন্ধের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
কেবলমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি, সবজি ও ওষধের দোকান ব্যতীত অন্য সকল দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই দিনমজুর রিক্সা চালকরা পাচ্ছেন না যাত্রী, ভ্যান চালকরা পাচ্ছেন না ভারা।
বসে আছেন বাজারে যাত্রীর অপেক্ষায়, কিন্তু মানুষ শূন্য বাজারে কখন আসবে যাত্রী রিক্সা চালক নিজেও জানেন না, জানেন শুধু পরিবার অপেক্ষা করছে বাজারের জন্য। সংসারের চিন্তায় যাত্রীর অপেক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অলস সময় পার করছেন রিক্সা ও ভ্যান চালকরা। আবার রিক্সা চালকরা পুলিশসহ প্রশাসনের গাড়ি ও ব্যক্তি দেখলে ভয়ে ছুটছেন এলোপাথাড়ি।
কয়েকজন রিক্সা চালক ও ভ্যান চালকের সাথে কথা বললে তারা জানায়, করোনাভাইরাসের ভয়ে মানুষ বাজারে নেই, তারপরও আমরা বসে আছি। করোনা আতঙ্কে বাজারে মানুষ নেই, আপনারা কেন রিক্সা নিয়ে বাজারে এসেছেন আপনাদের করোনাভাইরাসের ভয় নেই, এমন প্রশ্ন করলে, তারা জানান সংসারের টানে ঝুঁকি জেনেও আমরা রিক্সা চালাতে এসেছি। পেট তো বুঝে না ভাইরাস, করোনায় ভয়ে থাকলে সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। যাত্রী, নিয়ে যাবেন গন্তব্যে, পাবেন কিছু টাকা, ক্রয় করবেন খাদ্য সামগ্রী, সে অপেক্ষায় বসে আছেন রিক্সা ও ভ্যান চালকরা।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তিত। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী সারাদেশ ন্যায় কুতুবদিয়াকেও লকডাউন করা হয়েছে। আমি রিক্সা চালকসক সকল শ্রমিক, কর্মজীবীসহ সব ধরণের মানুষকে বাড়িতে অবস্থান করার আহবান জানান। যারা দরিদ্র তাদের খোজ - খবর নিয়ে বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্ব স্ব এলাকার বৃত্তবানদের সহযোগী করার আহবান জানানো হলে তারও অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ান। দ্বীপের মানুষ যাতে কেউ অনহারে না থাকে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment