একুশে মিডিয়া, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ জেলা শহরের চাকলা পাড়া এলাকার মৃত সামছুর রহমানের ছেলে রবিউল ইসলাম রবি বাসা বাড়িতে টিউশন করেন। একই সাথে একটি কোচিং সেন্টারে পড়িয়ে সংসার চলছিল তার। গেলো ৩ মাস আয়ের সব পথ বন্ধ। এতদিন ছাত্র-ছাত্রীরা সাহায্য করে আসছিল। কিন্তু আর কত? ঘরে খাবার কিনতে হবে। ব্যাংকে জমা আছে মাত্র দুই হাজার সত্তর টাকা।
নিরুপায় হয়ে এক হাজার পাঁচশত টাকার একটি চেক লিখে ব্যাংকের লাইনে দাড়ান তিনি। চরম অব্যবস্থাপনা দেখে প্রতিবাদ করে বসেন। বিনিময়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে তাকে। রক্ত বন্ধ করতে মাথায় সেলাই দিতে হয়েছে তার। ভেঙ্গে গেছে চোখের চশমা, হাতে থাকা মোবাইল সেট। গায়ের জামা কাপড়ে রক্ত লেগে আছে। রোজা ছিলেন তিনি। কষ্ট হয়েছে কিন্তু রোজা ভাঙ্গেননি । ইফতার করেছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন রবিউল ইসলাম রবি ।
ঘটনটি ঘটেছে ১৭ মে রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে অগ্রণী ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখায়। কিন্তু ঘটনাটি সম্পূর্ণ ধামাচাপা পড়ে যায়। সন্ধ্যায় এ খবর জানাজানি হয়ে পড়ে। এরপর তোলপাড় শুরু হয়।
একুশে মিডিয়াকে খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান। ওসি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠনো হয়। বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হওয়ার পরে ব্যাংকটির ম্যানেজারসহ কয়েক জন কর্মকর্তাকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। এক পর্যায়ে ব্যাংক ম্যানেজার ওই গ্রাহকের হাত ধরে মাফ চেয়ে নিয়েছেন বলে জানান ওসি।
রবিউল ইসলাম রবি একুশে মিডিয়াকে বলেন, ঘটনা সময় উপস্থিত সকলে হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে। ভয়ে তাকে রক্ষায় একজনও জন্য এগিয়ে আসেননি। দৌড়িয়ে থানার দিকে যাচ্ছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রক্ত ঝরতে দেখে রাস্তায় ডিউটিরত এক পুলিশ কনস্টেবলের চোখ দিয়ে পানি ঝরতে দেখেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। ওষুধ কিনবে এমন টাকাও ছিলনা আহত ওই ব্যক্তির পকেটে। হাতে পাঁচশত টাকাও ধরিয়ে দিয়েছেন ওই অজ্ঞাত নামা পুলিশ সদস্য।
রবিউল ইসলাম রবি অভিযোগ করেন ব্যাংক ম্যানেজার হাশিমুর রহমানের নির্দেশে দুইজন সিনিয়র অফিসার সাইফ মাহমুদ ও বেনজির আহম্মেদ এবং আনসার সদস্য মনির (প্রহরী) মিলে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। থানায় ঘটনাটি মিটমাট হওয়ার পরে আরেক দফায় তাকে স্থানীয় সরকারি কেসি কলেজের কাছে একটি কম্পিউটারের দোকানে মারপিটের চেষ্টা করা হয। ফের তিনি সদর থানায় ছুটে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক ঝিনাইদহ জোনের এজিএম দ্বীন মুহাম্মদ খবরের সত্যতা পরোক্ষ ভাবে স্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, গ্রাহককে মারপিট করার ঘটনাটি শুনেছি এবং ঘটনটি দুঃখজনক। তিনি আরো বলেছেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজার হাশিমুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার ভাষায় ঘটনাটি মিটমাট হয়ে গেছে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment