রেখা মনি, রংপুর:
তিনি নন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অথবা শিল্পপতি। অথবা রংপুরের রাস্তাগুলোতে কোনদিন তার ব্যানার দেখা যায়নি সমাজসেবক হিসেবে। সেই লোকটি রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জনের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায়। শুধু রমজান নয় দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিলিয়ে যাচ্ছেন চাল, ডাল, তেল আলু, লবন, সাবান আটাসহ বিভিন্ন নিত্যপন্য। রংপুরের চকবাজার নিবাসী মমিনুল ইসলাম মৃত পিতা-মাতার মাগফেরাত কামনায় এভাবেই দান করে যাচ্ছেন অকাতরে।
নগরীর মডার্ন মোড়, তাজহাট মোড় ও বিভিন্ন জায়গায় সন্ধ্যা হবার আগেই রান্না করা খাবার নিয়ে পৌঁছে যান মমিনুল। ভাত অথবা খিচুড়ি, ডিম ভুনা, সবজি, মাঝে মাঝে মাছ থাকছে খাবারের মেনুতে। স্থানীয় থানার পুলিশ সামাজিক দুরত্ব বজায়ের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই সাহায্য করে আসছে তাকে বলে জানান মুমিনুর হোসেন। মডার্ন এলাকার শ্রমিক গোলাপ মিয়া বলেন, 'আমি জানিনা ওনার নাম কি? কিন্তু কয়েকদিন সন্ধ্যায় আমরা তার রান্না করা খাবার পেয়েছি। সারাদিন রোজার পর যখন খাবার নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম তখন আল্লাহ্ বোধহয় ওনাকেই পাঠিয়েছিলেন রান্না করা খাবার নিয়ে। আমি ও আমার ছেলে খেয়ে দেখেছি খাবার অনেক যত্নে রান্না করে নিয়ে এসেছেন।'
২৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, " লকডাউনের শুরু থেকেই মুমিনুল ভাই দান করে যাচ্ছেন। যারা লোকলজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছে না রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে আসছেন। "
কেবল মমিনুল নয় তার স্ত্রী শিল্পী ও আশেপাশের বাড়ির খোঁজ রাখছেন নিয়মিত। কারমাইকেল কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার কারণে অধিকাংশ ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। শিল্পী বলেন, "কিছু মেস মালিক কেবল মেসের ভাড়া দিয়ে জীবন যাপন করে আসছে। কিন্তু সেগুলো বন্ধ হওয়ায় মেস মালিকের মাথায় বাজ পড়েছে। দাদের কেউ ত্রাণও দেয়নি। আমি লোকের মুখে শুনে তারা যাতে লজ্জা না পায় সেজন্য চুপ করে দিয়ে এসেছি। আমার স্বামী দান করতে ভালবাসে, তার এই কর্মকাণ্ড আমাকে অনুপ্রেরিত করেছে"
ইতোমধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে চাল, ডাল, তেল, আলু, চিনি সেমাই মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দিতে শুরু করেছেন মুমিনুল। তিনি বলেন, "মানুষের টাকা থাকলেও তা দিয়ে গরীব মানুষকে সাহায্য করতে চায়না। কিন্তু সবাই যদি আখেরাতের কথা চিন্তা করে গরিব মানুষকে দান করতো তাহলে কেউ আর উপোষ থাকতো না। আমি কেবল আমার মরহুম পিতা আলহাজ্ব মকবুল হোসেন ও মরহুম মাতা আলহাজ্ব রেজেকা খাতুনের আত্মার শান্তি কামনায় দান করছি।
এ ব্যাপারে তাজহাট থানার ওসি শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, "মমিনুল ইসলাম আমাদের কাছে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য সাহায্য চেয়েছিল। আমরা কয়েকদিন তাকে সাহায্য করেছি।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment