সৈকত আচার্য্য, বিশেষ প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাগর উপকূলবর্তী বাহারছড়া ইউনিয়নে একের পর এক খুনের ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। একদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ছেলেদের হারিয়ে বাবা মায়ের আহাজারি। অপরদিকে প্রতিপক্ষের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কোপে স্বামীকে হারিয়ে কাতর হয়ে পড়েছে স্ত্রী।
গত ১২ মে উপজেলার বাহারছড়া ও সাধনপুরে পৃথক ঘটনায় ১ দিনে ৩ খুন নিয়ে যখন সারা বাঁশখালী জুড়ে আলোচনার ঝড় চলছে ঠিক এর ১৫ দিনের মাথায় গত সোমবার (২৫ মে) বিকেলে বাহারছড়া ইউনিয়নের রত্নপুর গ্রামে ঘটে যায় আরো একটি হত্যাকা-। সামান্য কিছু জায়গা ভরাটকে কেন্দ্র করে সামাজিক কোন্দলের জের ধরে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কোপে নির্মম ভাবে খুনের শিকার হয় এরফানুল হক (৩২) নামে ওই এলাকার এক যুবক। এ ঘটনায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আশংকাজনক অবস্থায় ২ জনকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির সামনে পুকুর সংলগ্ন কিছু অংশে জায়গা ভরাট করাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষের হাতে খুনের শিকার হয় এরফানুল হক। সে ওই এলাকার হাফেজ নুরুল ইসলামের পুত্র। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় একটি মুদির দোকানের ব্যবসা করতো সে। তার ২-৪ বছর বয়সী দুই অবুঝ শিশু সন্তান রয়েছে। এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে মঙ্গলবার (২৬ মে) সকালে নিহত এরফানুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরো এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। তার পরিবারের সদস্যরা কান্নায় আহাজারিতে ভেঙে পড়েছে। বাড়িতে এত লোকের ভিড় দেখে বিচলিত হয়ে উঠেছে নিহত এরফানুল হকের দুই অবুঝ শিশু। তারা এদিক ওদিক ছুটতে থাকে আর বাড়িতে আসা পরিচিত মুখ গুলোর কাছ থেকে শুধুই জিজ্ঞেস করছে- ‘আব্বু কোথায়, কবে আসবে তাদের আব্বু?’। ওই দুই অবুঝ শিশু জানে না তাদের আব্বু চিরতরে চলে গেছে না ফেরার দেশে, কিছু মানুষরূপী পাষন্ড নরপিশাচ তাদের আব্বুকে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে জীবনের তরে। এ সময় এরফানুল হকের ছোট ভাই প্রতিপক্ষের কিরিচের আঘাতে আহত এমরানুল হক বলেন, ‘ঈদের জামাত শেষে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় মো. কালু, নুরুদ্দীন ও মো. এনামের নেতৃত্বে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আমার ভাই এরফানুল হককে একা পেয়ে ধারালো কিরিচ দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করেছে। আমার ভাইয়ের চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা আমরাদেরকেও কুপিয়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত করেছে।’
এদিকে এ ঘটনায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন একই এলাকার মৃত আলী আহমদের পুত্র মুন্সি আলম (৫৫), মৃত দুধু মিয়ার পুত্র মো. মুসা (৬০), নিহত এরফানুল হকের ছোট ভাই এমরানুল হক (২৮), মৃত ফজল আহমদের পুত্র জাফর আহমদ (৬৫), মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র নুর মোহাম্মদ (৩২), মৃত ছাবের আহমদের পুত্র মো. ইউনুস (৪৫), ফরিদ আহমদের পুত্র গিয়াস উদ্দিন (২৫) ও আলী ইসলামের পুত্র আশেক (২৫)। আহতদের মধ্যে মুন্সি আলম ও মো. মুসাকে আশংকাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মুন্সি আলমের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রেজাউল করিম মজুমদার একুশে মিডিয়াকে বলেন, ‘সামাজিক কোন্দলের জের ধরে এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment