ফরিদা আক্তার, উপ-সম্পাদক-একুশে মিডিয়া:
গাইনি ডাক্তার জাহানারা শিখা। করোনার শুরু থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে। বাসায় সিভিয়ার এজমায় আক্রান্ত স্বামী আর অসুস্থ সন্তান রেখেও দায়িত্ব পালনে পিছ পা হননি করোনা যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা এ নারী চিকিৎসক। চিকিৎসা দিয়েছেন করোনা পজেটিভ রোগীদের। শুধু কি তাই, সবশেষ করোনা আক্রান্ত এক রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচারও করেছেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে ১৫ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকেন সকল চিকিৎসক। এর মধ্যেই করা হয় তাদের করোনা পরীক্ষা’।
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন করোনা পজিটিভ নারী চিকিৎসক
আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে বাসায় যাওয়ার সুযোগ পান চিকিৎসকরা। অন্যদের মত রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়ায় বাসায় থাকা স্বামী সন্তানের কাছে যান ডাক্তার জাহানারা শিখা। বাসায় যাওয়ার দু’দিনের মাথায় তার মোবাইলে হাসপাতাল থেকে আসে একটি ক্ষুদে বার্তা। যে বার্তাটি নিমিষেই অন্ধকার নিয়ে আসে তার সাংসারিক জীবনে। কারণ, দু’দিন আগে যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ জানিয়েছিল সেই হাসপাতালই দু’দিন পর জানালেন তিনি করোনা পজিটিভ। অথচ করোনা নেগেটিভ জেনে দু’দিন ধরে বাসায় সিভিয়ার এজমায় আক্রান্ত স্বামী আর অসুস্থ সন্তানের সাথে সময় কাটিয়েছেন তিনি। তাইতো, করোনা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এ তামাশার জন্য নিজের পরিবারকে বিপদ উপহার দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন এ চিকিৎসক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আমি আসলে কোভিড পজিটিভ!’ শিরোনাম শীর্ষক একটি স্ট্যাটাস দিয়ে পরিবারের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন করোনা যুদ্ধের এ সম্মুখ যোদ্ধা। জানতে চেয়েছেন, তার পরিবারকে বিপদে ফেলার এ দায়ভার এখন কে নিবে’ ?
ডাক্তার জাহানারা শিখার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘আমি আসলে কোভিড পজিটিভ !’
দু’দিন আগে আমাকে ফোনে জানানো হয়, ‘আপনি নেগেটিভ’। কোয়ারেনটিন এর শেষদিনে এই সুসংবাদ পেয়ে আমি মহানন্দে বাসায় চলে আসি। বাসায় অবস্থান করার দ্বিতীয় দিনে আজ টেক্সট এসেছে, “ positive” স্যাম্পল দেয়ার নবম দিনের অফিসিয়াল রিপোর্ট এটা। হাহ্!!!
কোভিড পজিটিভ রোগীর অপারেশন করেই চলে গিয়েছিলাম কোয়ারেনটিন এ। নিজে পজিটিভ হওয়ার ভয় ছিল, তাই পরিবারকে নিরাপদ রাখার জন্য চেষ্টার অন্ত ছিলনা। বাসার বাইরেই ছিলাম ঈদের আগের দিন থেকে শুরু করে দীর্ঘ ষোল দিন। এরই মাঝে, এক্সপোজার এর সপ্তম দিনে টেস্ট করার জন্য আমারই প্রতিষ্ঠানে স্যাম্পল দিই। তখনও আমার কোয়ারেনটিন ছয়দিন বাকি। আমার ধারণা ছিল, বাসায় যাওয়ার আগে রিপোর্ট পেয়ে যাব- নেগেটিভ হলে বাসায় যাব, পজিটিভ হলে হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকবো। (উল্লেখ্য আমার বাসায় নিজেকে আলাদা রাখার মত পরিস্থিতি নেই )’
আমি কোভিড কে ভয় পাইনা, সে জন্যই শিশু সন্তানের অসুস্থতা কিংবা স্বামীর সিভিয়ার এজমা কে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাইনি আমার দায়িত্ব পালনের পথে। কোভিড ডেডিকেটেড আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড রোস্টার অনুযায়ী প্রথম থেকেই দায়িত্ব পালন করে গেছি নিষ্ঠার সাথে। আমার কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পূর্ণ ওয়াকিবহাল আছেন।’
আজও আমি নির্ভয়, আমি জানি কোভিড আমার কিছু করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। কিন্তু আমার পরিবারের সদস্যদের যে বিপদ আমি উপহার দিয়ে এলাম, তার দায়িত্ব কে নেবে’?
আমার কর্তৃপক্ষ কী পারতেন না স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার রিপোর্টটি কিছু আগে সংগ্রহ করতে? অথবা টেলিফোনে রিপোর্ট বলে দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী পারতেন না একটু নিশ্চিত হয়ে নিতে?’
আজ মনে হচ্ছে -আমার আগেই ভাবা উচিৎ ছিল, অসম্পূর্ণ মস্তিষ্ক আর সীমাবদ্ধ জীবনীশক্তি নিয়ে জন্মানো আমার শিশু সন্তানটি কি করে থাকবে দীর্ঘদিন তার মা কে ছাড়া। ভাবা উচিত ছিলো, আমার দ্বারা আক্রান্ত হলে আমার ভয়ানক এজমায় আক্রান্ত স্বামীকে বাঁচাবো কী করে’?
আজকে আমার চিৎকার করে কান্না করার দিন!!
আজকে আমার অনুতাপ করার দিন!!
নিজেকে অভিশাপ দেয়ার দিন!!
আমার পরিবারের কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইবার দিন!’
আর সর্বোচ্চ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মহান আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনার দিন ‘হে রাব্বুল আলামীন! তুমি আমাদের রক্ষা করো। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমাদের’।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment