একুশে মিডিয়া, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, করোনার আগে যেভাবে আমরা চলতাম সেভাবে আর নয়। তিনি বলেন, সেভাবে চললে আমাদের পক্ষে হাসপাতাল প্রস্তুত রেখে ও আরও আইসোলেশন সেন্টার বানিয়েও করোনাভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে আমার সুরক্ষা আমার হাতে’।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সিটি হল কোভিড আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোও মাসের পর মাস বন্ধ রাখেনি, সেখানেও খুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে এখনো মানুষ মারা যাচ্ছে করোনাভাইরাসে। এখনো প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এরপরও তারা লকডাউন শিথিল করেছে। কাজকর্ম শুরু করেছে। তার মানে এই নয় করোনাভাইরাসের আগে যেভাবে চলতাম সেভাবে এখনো চলব’।
তিনি বলেন, আমরা কাজ করব নিজেকে স্বাস্থ্যগতভাবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সুরক্ষিত রেখে। তাহলে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমরা এই মহামারীকে মোকাবেলা করতে পারব। ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক সব কিছু মনিটর করছেন। তার নির্দেশনাতেই সিটি কর্পোরেশনসহ আমরা সবাই কাজগুলো করছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের দেশ উন্নত দেশ নয়, তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার উন্নত দেশ থেকে কম।’
এই মহামারী সামাল দেয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোও আগে থেকে প্রস্তুত ছিল না। যে কারণে সেখানে হাজার হাজার ও লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে অর্থনীতি উন্নত দেশের মতো অতো মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে নয়। এরপরও মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে দুই মাসের বেশি সময় সবকিছু বন্ধ ছিল। এখন সীমিত আকারে খোলা হয়েছে। কারণ জীবন এবং জীবিকা দুটিই রক্ষা করতে হবে’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পৌনে এককোটি মানুষের শহর চট্টগ্রাম। প্রতিদিন আরও বিশ লাখ মানুষ এখানে যাতায়াত করেন। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে চার হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুরুতে চট্টগ্রাম শহরে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য অনেক সঙ্কট ছিল। এখনো সঙ্কট কেটে গেছে তা নয়, সঙ্কট আছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা শুরু থেকে চেষ্টা করেছি বিভিন্ন হাসপাতালকে উদ্বুদ্ধ করার এবং সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলোকে আরও প্রসারিত ও উন্নত করার জন্য।’
তিনি বলেন, শুরুতে এখানে কোনো ভেন্টিলেশন সুবিধাই ছিল না করোনা রোগীদের জন্য। এরপরই জেনারেল হাসপাতালে ১০টি ভেন্টিলেশনসহ এখন ১৫০ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৪টি ভেন্টিলেশন সিস্টেম দিয়ে কাজ শুরু করেছে, সহসাই তারা ভেন্টিলেশন ১০টিতে উন্নিত করবেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৬টি ভেন্টিলেটর আছে’।
সেখানে আরও বাড়ানোর চেষ্ঠা চলছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ইতিমধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু হয়েছে, সেখানেও সবগুলো ভেন্টিলেটর চালু করার চেষ্টা চলছে। ইউএসটিসির বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছে। তাদের ২০টি ভেন্টিলেটর আছে। মন্ত্রী বলেন, তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে যতটুকু জেনেছি সব রোগীকে ভেন্টিলেটর দিতে হয় না।’
৮০ ভাগ করোনা রোগী ঘরেই চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়। ১০ ভাগের মতো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হতে পারে। এরমধ্যে জটিল রোগীর সংখ্যা আরও কম। কিন্তু রোগী যেভাবে বাড়ছে সেজন্য আমাদের আইসোলেশন সেন্টার দরকার। তিনি বলেন, অনেকের উপসর্গ খুব কম হলেও দুই রুমের বাসায় আইসোলেশনে থাকা সম্ভব নয়। সেখানে যদি তাকে আইসোলেশনে রাখা হয় ঘরের অন্যদেরও অসুবিধা হয়। সেই ক্ষেত্রেও আইসোলেশন সেন্টারের দরকার আছে’।
আবার হালকা চিকিৎসারও দরকার আছে। ড. হাছান বলেন, এ ধরণের আইসোলেশন সেন্টারে যদি কেউ থাকে তাহলে পরিবারের যেমন সুবিধা হয়, পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয়। সে জন্য তিনি সিটি কর্পোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং সীকম গ্রুপ সিটি কনভেনশন সেন্টারটি দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক মানবতার কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইনশাআল্লাহ এই মহামারী মোকাবেলা করে আবার ভোরের সুর্য উদিত হবে, এই পরিবেশে নয়, আগের সেই প্রাণচঞ্চল পরিবেশে আমরা আবার কাজ করতে পারব।’
এটিই প্রত্যাশা, এটিই বিধাতার কাছে প্রার্থনা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ ও সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি’।
অনুষ্ঠানে সিটি হলের স্বত্বাধিকারী সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক লিখিতভাবে এ হলটি ব্যবহারের জন্য চসিককে সম্মতি দেন। এখানে ২১০টি শয্যা রাখা হয়েছে পুরুষদের জন্য। ৪০টি শয্যা নারী রোগীর জন্য দোতলায় আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে।’
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment