ময়মনসিংহ
জংশন রেলস্টেশন থেকে পূর্ব দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন। এই পথের বাঁ পাশ
দিয়ে আরেকটি রেললাইন আছে। এটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে কেওয়াটখালী লোকো
শেডে যুক্ত হয়েছে। এই রেলপথে শুধু ট্রেনের ইঞ্জিন এবং উদ্ধারকারী ট্রেন
যাওয়া-আসা করে।
রেলপথটিতে পাথরের পরিবর্তে ইট ব্যবহার করা হয়েছে। রেলপথে ইট
ব্যবহারের ছবি সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে জনমনে
দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মঙ্গলবার সকালে
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিন ধাপে প্রায় ১৫ জন শ্রমিক রেললাইনটিতে ইটের
টুকরা বিছিয়ে তার ওপর বালু দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন।
এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে কথা
বললে তাঁরা জানান, দিনমজুরির ভিত্তিতে এখানে তাঁরা কাজ করছেন। এর বেশি কিছু
তাঁদের জানা নেই।
স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানান, দু-তিন দিন ধরে ট্র্যাকে
(রেললাইনে) পাথরের পরিবর্তে ইট, বালু ব্যবহার করতে দেখেছেন। পাথরের
পরিবর্তে ইট ব্যবহার করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু
হয়েছে।
ট্র্যাকটি বেশ কয়েক বছর সংস্কার না করার ফলে
নাজুক হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে স্লিপার নেই কিংবা কাঠের স্লিপারগুলো ফেটে
গেছে। লাইনে পাথর ছিল না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অস্থায়ীভাবে
সাড়ে তিন ইঞ্চি উচ্চতায় ইট-বালু দেওয়া হয়েছে।
রেজাউল করিম, রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগের উপসহকারী জানান।
সুশাসনের
জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, পাথরের
পরিবর্তে ইট ব্যবহার করায় কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
দুপুরে
রেলপথটি পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়শা হক। তিনি বলেন,
এই কাজে অনিয়ম হয়েছে কি না, তা যাচাই করে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যেহেতু এটি সরকারি কাজ, তাই এখানে একটি সাইনবোর্ড প্রদর্শন করা উচিত ছিল।
কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ সেটি করেনি।
এ বিষয়ে জানতে
চাইলে রেলওয়ে প্রকৌশলী বিভাগের উপসহকারী (পথ) রেজাউল করিম বলেন, ট্র্যাকটি
বেশ কয়েক বছর সংস্কার না করার ফলে নাজুক হয়ে পড়েছে।
অনেক স্থানে স্লিপার
নেই কিংবা কাঠের স্লিপারগুলো ফেটে গেছে। লাইনে পাথর ছিল না। তাই ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অস্থায়ীভাবে সাড়ে তিন ইঞ্চি উচ্চতায় ইট-বালু দেওয়া
হয়েছে। মূলত পাথর বিছানোর আগে মজবুত ভিত হিসেবে ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে পাথর বরাদ্দ পাওয়া গেলে ওপরে তা বিছানো হবে।
রেলওয়ে
সূত্র জানায়, ১ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথটি সর্বশেষ ২০১৩
সালে সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ট্র্যাকটি সংস্কার
করা হয়নি। এর মধ্যে চলতি বছরই তিনবার দুর্ঘটনায় পড়ে ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়।
তাই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে ইট-বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।
রেললাইনে
ইট ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আবদুর রউফ
বলেন, এখানে কোনো প্রকার অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। রেল মন্ত্রণালয়ে পাথরের
চাহিদা জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন না হওয়ায় পাথর
বরাদ্দ আসেনি। তাই জরুরি ভিত্তিতে যেকোনো বড় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রায় ছয়
লাখ টাকা খরচ করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে রেললাইনে ইট ও বালু
ব্যবহার করা হয়েছে।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment