বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে অপহরণের ৮ মাসেও অপহৃত মাদরাসা ছাত্র মো. ইয়াছিন মো. মামুন (১৩) উদ্ধার হয়নি। ছেলেকে হারিয়ে বিধবা মা শাহনাজ আক্তারের কান্নায় প্রশাসনের কারো মন টলছে না। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন চিহ্নিত দাগী সন্ত্রাসী অপহরণকারীরা। মামলা উঠিয়ে নিতে প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দেয়ায় বাদি শাহনাজ বাড়িছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ প্রধান অপহরণকারী জয়নাল আবেদীন জন্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাসহ বহু মামলা রয়েছে।
এছাড়া তার মালিকাধীন ইলশার এসবিএস ইটভাটা গত ১০ জানুয়ারী পরিবেশ অধিদপ্তর গুঁড়িয়ে দিলেও ওই দিন রাতে আবার চালু করেছে। সাজাপ্রাপ্তসহ বহু মামলার আসামী হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সে যেকোন অপরাধ প্রকাশ্যে করে বেড়াচ্ছে নির্বিঘেœ। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে ৮ মাস আগে গত বছরের ২৩ মে অপহরণ হয় বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র মৃত নুরুল আনছারের পুত্র হাফেজ মো. ইয়াছিন আরাফাত মো. মামুন (১৩)। নোহা গাড়ি যোগে বাড়ির সম্মুখ থেকে অপহরণ করেন ২০০০ সালে দায়ের করা ধর্ষণ ২১৬নং মামলার ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী রায় হওয়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তসহ বহু মামলার আসামী জয়নাল আবেদীন প্রকাশ কালা জন্টু (৪৭) এর নেতৃত্বে আরও ৫ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। উল্লেখিত সন্ত্রাসীদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে অপহৃত মামুনের চাচা ও মৃত বাবার সাথে বিরোধ চলে আসছিল।
অপহরণের পর মামুনের মা বিধবা শাহনাজ আক্তার (৩৫) বাঁশখালী থানায় মামলা করতে গেলেও থানা পুলিশ রহস্যজনক কারণে মামলা নেননি। পরে অপহরণের ৪ মাস পর মা শাহনাজ বাদি হয়ে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-১ এ গত ১৬ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করেন।
আদালত বাঁশখালী থানার ওসিকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। ওই মামলা গত ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশে বাঁশখালী থানায় দায়ের হয়। দায়েরের পর থেকেও মামলার ১ নং আসামী জয়নাল আবেদীন প্রকাশ জন্টু, অন্যান্য আসামী জামাল আহম্মদ, মো. সাকিব, আব্দুল মতিন, মো. সোহেল প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করছেন না। আসামীরা মামলা উঠিয়ে নিতে বাদিনী শাহনাজ আক্তারকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই আতংকে বাদি বাড়িছাড়া হয়ে এখন পুকুরিয়া ইউনিয়নের পুকুরিয়ায় বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অপহৃত মামুনের মা মামলার বাদি শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘ অপহরণ মামলার আসামীরা আমাকে প্রকাশ্যে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। আমি ৮ মাস ধরে ছেলের খোঁজে পুলিশকে অনুরোধ জানালেও পুলিশ আমার ছেলেকে উদ্ধার করছে না। আমি সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ১ নং আসামী ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তসহ বহু মামলার আসামী হলেও তার ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার করছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে। অথচ গ্রেপ্তার হয় না। তার মোবাইল কললিষ্ট বের করলে নানা রহস্য পাওয়া যাবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. মোবারক হোসাইন বলেন, অপহৃত ছাত্রকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মামলার আসামী প্রকাশ্যে ঘুরলেও আমার আয়ত্তে নেই, তাই গ্রেপ্তার করতে পারছি না। তাছাড়া মামলাটিতে রহস্য আছে তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
মামলার ১ নং আসামী জয়নাল আবেদীন প্রকাশ জন্টু বলেন, অপহরণ মামলার বাদি শাহনাজ আক্তারের স্বামী নুরুল আনছার মৃত্যুর আগে আমার দায়ের করা এক মামলার আসামী ছিল। তাই ছেলে অপহরণের মিথ্যা মামলা করেছে। ছেলেটি আমি অপহরণ করিনি। তাছাড়া অপহরণ মামলা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে থাকা অন্যান্য মামলা ও সাজায় আমি জামিনে আছি।
একুশে মিডিয়া/এমএসএ
No comments:
Post a Comment