একুশে মিডিয়া, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:ছবি: একুশে মিডিয়া
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত ৭ শ্রমিকের ঘটনা দেখতে এসে বাঁশখালীতে ডা. জাফরুল্লাহ ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম ছাড়া শ্রমিককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করায় ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন । রবিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেছেন, ‘ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম ছাড়া শ্রমিককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করায় ঘটনাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন। পুলিশ স্বীকার করেছে ম্যাজিষ্ট্রেটের হুকুম ছাড়া তারা শ্রমিকের ওপর গুলি করেছে।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বীকার করার রেকর্ড আছে। পুলিশের সাথে সাথে একটি সিন্ডিকেট বাহিনীও গুলি করেছে। শ্রমিকদের নির্যাতন নিপীড়ন করছে। ওই সিন্ডিকেট বাহিনীকে খুঁজে বের করতে হবে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে, কারণ নিহত ১৮ বছরের শ্রমিকরা আরও ৪০ বছর বেঁচে থাকত। বেঁচে থাকলে বহু আয় রোজগার করত। কয়লা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কিছুই নয়।
বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত ১৭ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে নিহত গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনার মাহমুদ রেজার বাড়ির উঠানে গতকাল বিকাল ৫টায় তিনি উপরোক্ত বক্তব্য দেন। তিনি আরও বলেন, ‘ সরকার পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পুলিশ প্রকৃত ঘটনা মুখ খুলতে পারছেন না। সরকার ১৬ বছরে যে উন্নয়ন করেছে তা গন্ডামারায় ভেসে উঠেছে। এত বড় প্রকল্প অথচ গন্ডামারায় রাস্তাঘাটের বেহালদশা। উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি গন্ডামারার বেহাল রাস্তাঘাটে প্রকাশ পাচ্ছে।
ওখানে বক্তব্য দেয়ার আগে তিনি বিকাল ৩টায় বাঁশখালীর গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় যান। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের দক্ষিণ প্রান্তের সড়ক পথ থেকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ তার সঙ্গে যাওয়া ৮ সদস্যের টিমকে প্রকল্পে ঢুকতে দেয়নি। ওখানে প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মো. ফারুক ও বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবিরের সাথে কথা বলে পুলিশের গুলিতে নিহত বাঁশখালীর পূর্ব বড়ঘোনার মওলানা আবু ছিদ্দিকির ছেলে মাহমুদ রেজা (১৯) এর বাড়িতে যান। ওখানে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং নিহতের পরিবারের কবর জিয়ারত করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষ থেকে ২০০ জন হতদরিদ্র পরিবারকে ত্রাণও প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পে ঢুকতে বাধা দেয়ার ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ আমাকে ঢুকতে বাধা দেয়নি। আমি স্বেচ্ছায় যায়নি। আমি শান্তি চাই, সংঘাত নয়। যেভাবেই হোক উন্নয়ন হলেই হল। তবে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় বিচার হওয়া জরুরী।
গন্ডামারায় তার সাথে আরও ছিলেন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি পরিষদ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ শাকী, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াজ আজিজ ওলফাত, রাষ্ট্র চিন্তার সদস্য এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ব্যারিষ্টার সাফিয়া আরমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।তিনি বলেন, যারা নিহত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা করে দিতে হবে, তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল সকালে গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন। ২১ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. শিমুল (২৩) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৩০ জন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলা হয়েছে দুইটি।
২৩ এপ্রিল ২০২১ ইং# মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত একুশে মিডিয়া’র সংবাদ।
No comments:
Post a Comment