মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম: একুশে মিডিয়া ফাইল ফটো
আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এদিনে আড়াইশ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। জলোচ্ছ্বাস হয় ৬ ফুট উচ্চতায়। বাংলাদেশের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার লোক প্রাণ হারান। ১ কোটি মানুষ সর্বস্ব হারায়। ক্ষতি হয় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারার, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী কুতুবদিয়া উপজেলার ও ভোলা, হাতিয়ায়। প্রাকৃতির দুর্যোগ এই ঘূর্ণিঝড়ের ৩০ বছর অতিবাহিত হলেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূলবাসী এখনো অরক্ষিত।
সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর বেদনার দিবস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস সংকট। প্রতি বছর এ দিনটি পালন উপলক্ষে বৃহত্তম চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন থাকলেও এবারে কোনো কিছুই থাকছে না। স্বজনহারা মানুষগুলো বাড়িতে ফাতিহা আর দোয়া ছাড়া কিছু করতে পারছে না। স্বজনহারা মানুষগুলো বাড়িতে ফাতিহা আর দোয়া ছাড়া কিছু করতে পারছে না।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ৪০ হাজার নারী পুরুষ প্রাণ হারান। লক্ষাধিক গবাদি পশু,হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়। ভয়াবহ সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ছনুয়া, খানখানাবাদ, গন্ডামারা, বাহারছড়া, শেখেরখীল, সরল, উপকূলীয় এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় ১১৮টি স্কুল কাম আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র নদী গর্ভে বিলীন ও অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
৯১ এর ২৯ এপ্রিল যে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় সীতাকুণ্ড উপকূলকে তছনছ করে দিয়েছিলো তা এখনো ভুলতে পারেনি এ উপজেলার মানুষ। সেসময় অরক্ষিত উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল কেড়ে নিয়েছিলো শতাধিক মানুষের প্রাণ। মারা পড়েছিলো বহু পশুপাখি। নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো হাজার হাজার ঘর বাড়ি। জলোচ্ছ্বাসে নিমজ্জিত হয়ে ফসলি জমিগুলোর যে ক্ষতি সেদিন হয়েছিলো তার জের বহুদিন বইতে হয়েছিলো সীতাকুণ্ড বাসীকে। ফলে দুঃসহ সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পর সরকার সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, উপকূল রক্ষায় দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বনায়ন প্রভৃতির মাধ্যমে উপকূলবাসীকে রক্ষার চেষ্টা করলেও আশ্রয় কেন্দ্রের স্বল্পতা, নির্বিচারে বন উজাড় ও বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এখনো আতংকিত হয়ে উঠেন স্থানীয়রা। সীতাকুণ্ডের ৫ লক্ষাধিক মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র মাত্র ৫৯টি।
জলোচ্ছ্বাসে মারা গেছে ৯০ হাজার ৫৪৩ নারী-পুরুষ-শিশু। এর মধ্যে কুতুবদিয়ায় মারা যায় প্রায় ৫৭ হাজার, মহেশখালীতে ১২ হাজার ও চকরিয়ায় ২১ হাজার মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় গবাদি পশু ও ফসলের। জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন উপকূলে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর তৈরি করা হয় ৫৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে ১৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এরিমধ্যে বর্তমানে কুতুবদিয়ায় ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আরও ৫০টির বেশি কেন্দ্র অবৈধ দখলে চলে গেছে। মহেশখালী উপজেলায় ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টির বেশি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকার লোকজন বলেন, এখনো সেই দিনের কথা মনে পড়লে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। আঁতকে উঠি।
২৯ এপ্রিল ২০২১ ইং# মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত একুশে মিডিয়া’র সংবাদ।
No comments:
Post a Comment