সবুজ সরকার, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সরকার কর্তৃক ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণার কারণে এবারও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে মেলাকে কেন্দ্র করে উৎপাদিত বিশেষ ধরনের কাপড় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বেলকুচি উপজেলা সহ দক্ষিণাঞ্চলের তাঁত কারখানা মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র বিক্রি করতে না পারায় অনেক মালিক পুঁজি হারিয়ে হাতাশায় দিন পার করছেন। আবার কেউ কেউ পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
এ অবস্থায় তাঁতশিল্পের সঙ্গে ওঁৎপোত ভাবে জড়িত প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন।
তাঁত কারখানা মালিকেরা বলছেন,১লা বৈশাখকে সামনে রেখে বিশেষ ধরনের শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ উৎপাদন করা হয়।
যা শিশু, নারী-পুরুষ শুধু পহেলা বৈশাখেই পড়েন। অন্যান্য মৌসুমে এই তাঁতবস্ত্র বিক্রি হয় না। এরই মধ্যে সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে পড়েছে পহেলা বৈশাখী। ফলে বৈশাখী মেলা হবে না।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বৈশাখী কাপড় কেনার জন্য বেপারিরা আসবেন না, তাই কাপড়ও বিক্রি হবে না। অথচ, গত বছর এবং এবার মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বৈশাখী কাপড় গুদামে পড়ে আছে। ফলে তাঁতশিল্প ও শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
সরকারিভাবে তাদেরকে প্রণোদনার ব্যবস্থা না করলে, ভবিষ্যতে এ অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
উৎপাদিত পণ্যের অব্যাহত লোকসানে তাঁতিরা পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষ করে প্রান্তিক তাঁতিরা চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন। ঋণ পরিশোধ ব্যর্থ হয়ে অনেকেই তাঁত বিক্রি করে কেউ পোশাক শিল্পে, কেউবা মাটিকাটা শ্রমিক আবার কেউ রিকশাচালকের কাজ নিয়েছেন।
কেউ কেউ পুঁজি হারিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় অর্ধেকের বেশি তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি -এনায়েতপুর-, শাহজাদপুর, সদর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় তাঁতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জেলা তাঁত মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী-হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা লক্ষাধিক এবং বিদ্যুৎচালিত পাওয়ারলুমের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
সিরাজগঞ্জ জেলা তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান জানান, তাঁতশিল্পের প্রতি সরকারের সুনজর নেই। সারা দেশের প্রায় তিন কোটি লোক এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জেই প্রায় তিন লক্ষাধিক তাঁত রয়েছে।
করোনার শুরু থেকে অব্যাহত লোকসানের কারণে প্রায় ৭০ ভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁত মালিক, শ্রমিক ও কাপড় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
১৩ এপ্রিল ২০২১ ইং।।। মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত সংবাদ।
No comments:
Post a Comment