একুশে মিডিয়া, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
সংগৃহিত ছবি |
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট, বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন কর্মকর্তা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও ভুক্তভোগী জনসাধারণের মাধ্যমে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ জুলাই ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার প্রথম শ্রেণির নন- ক্যাডার ডাক্তার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে তাঁর চাকরি নিয়মিত হন। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি বাঁশখালীতে যোগদানের পর থেকে প্রতারণা করে তাঁর ব্যবস্থাপত্র ও বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত তাঁর চেম্বারের সাইনবোর্ডে বিসিএস (স্বাস্থ্য) লিখতে থাকেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিষয়টিও উহ্য রাখেন। এমন কী হাসপাতালের দো-তলা স্টাপ কোর্য়াটারের একটি ভবন পুরো দখলে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই প্রাইভেট ক্লিনিকের মত চিকিৎসা বাণিজ্য করে চলছেন।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৭ একর জায়গা নিয়ে হাসপাতাল চত্বরের অবস্থান, চারদিকে বিশাল সীমানা প্রাচীর, স্টাপ কোয়াটার, ফলজ নানা জাতের বাগান ও পুকুর রয়েছে। সরকারি নথিপত্র দেখে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে বাঁশখালী হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও মেরামত বাবদ ৫০ লাখ টাকা, গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ ও মেরামত বাবদ ১৭ লাখ টাকা, চিকিৎসকদের ভবন মেরামত বাবদ ১৫ লাখ টাকা, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ভবন মেরামত বাবদ ২২ লাখ টাকা, হাসপাতালে টাইলস্ স্থাপন ও এক্সরে রুম বাবদ ২৪ লাখ টাকা, কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ বাবদ পুকুরিয়ার জন্য ৪৫ লাখ টাকা, পাইরাং ও গন্ডামারায় কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামতের জন্য ১৬ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কাজ হয়েছে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখলে এসব উন্নয়নের গড়মিল চোখে পড়ে।
এমনকি কোন কোন কাজের অস্থিত্বই নেই। এর দৃষ্টান্ত প্রমাণ বাঁশখালী হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তার জানান, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে হাসপাতালের লিচু বাগান লাগিয়ত বাবদ ৩৫ হাজার টাকা, নারিকেল গাছ লাগিয়ত বাবদ ৫৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা নেই। কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার লাইন ডাইরেক্টর ডাঃ সহদেব চন্দ্র রাজবংশী এবং ডাঃ মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক কয়েকটি বিলে দেখা গেছে বাঁশখালী হাসপাতালের ডাঃ মো. শফিউর রহমানের জন্য বরাদ্দ সরকারি জীপ গাড়ির বিল প্রতিমাসে ৬০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হয়েছে।
বাঁশখালী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আহমদ ছফা বলেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হচ্ছে না দুই বছর ধরে। ফলে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার জন্য বরাদ্দের টাকা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কারো সিদ্ধান্ত ছাড়া খরচ করেন। কোন খাতে আয়-ব্যয় কী, উন্নয়ন কী - তা হাসপাতাল কমিটির সদস্যদের অন্ধকারে রাখেন। হাসপাতালের টেকনোলজিষ্ট মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন মাহবুব বলেন, হাসপাতালের আমি নিন্ম শ্রেণির কর্মচারী। ভুয়া বিল করে টাকা উত্তোলন করার ক্ষমতা আমার নেই। করোনা স্যাম্পল পাঠানোর নামে দুইবার করে বিল উত্তোলন করতে আমাদের বাধ্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শফিউর রহমান মজুমদার স্যার। ওইসব বিলের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই বলে খোদ হাসপাতালের ডাক্তারদের মধ্যেও ক্ষোভ চলছে। অবশ্য প্রতিটি বিলে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শফিউর রহমান মজুমদার ও মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন মাহবুবের স্বাক্ষর।
বাঁশখালী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শফিউর রহমান মজুমদার নানা অনিয়মের ব্যাপারে বলেন, ‘ আমি বিসিএস ডাক্তার নই- এটা সত্যি। তবে এসব ভুল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রেস । তারা ভুল করে আমাকে বিসিএস (স্বাস্থ্য) বানিয়ে দিয়েছেন। জ্বালানি খরচ উত্তোলনে আমি কোন দুর্নীতি করিনি। বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজের দায়িত্ব ঠিকাদারের। আমার নয়। ওরা কিছু কাজ করেছেন। বাকী কাজ আবার শুরু করবেন। আমি একজন নীতিবান ও সৎ ডাক্তার। সব সময় চেষ্টা করি চরিত্রে কালিমা না লাগাতে। কিছু শত্রু ও দুস্কৃতিকারী আমার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়াচ্ছে। দেশে আমাদের মত ডাক্তারের অভাব বলেই বিভিন্ন হাসপাতালে এখন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নেই। আমি চলে গেলে বাঁশখালীও খালি পড়ে থাকবে। এরকম অপবাদ কী সহ্য করা যায় ? চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদারের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এখন কিছু বলা যাবে না। তদন্তের পর সঠিক বিষয় উপস্থাপন করা হবে।
শুক্রবার ২৮ মে ২০২১ ইং# সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম কর্তৃক প্রকাশিত একুশে মিডিয়া’র সংবাদ।
একুশে মিডিয়া.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
No comments:
Post a Comment