একুশে মিডিয়া, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
বিচারের জন্য জমাকৃত টাকা ফেরৎ চাওয়ায় পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে অস্ত্রগুলিসহ সিএনজি অটোরিকশা চালককে পুলিশে দিল শেখেলখালী ইউপি চেয়ারম্যান,পরে গভীর রাতে থানা থেকে মুক্তি
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে
সালিসী বৈঠকে জমা দেয়া টাকা ফেরৎ চাওয়ায় পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে অস্ত্রগুলিসহ সিএনজি অটোরিকশা চালককে থানায় সোর্পদ করেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পরে থানা পুলিশের কয়েকদফা তদন্তে এবং গ্রামবাসীর ক্ষোভের মুখে
বুধবার (৭ জুলাই) গভীর রাতে থানা পুলিশ মুক্তি দিয়েছে অটোরিকশা চালক নুরুল কাদের (৫০)কে। এর আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পত্রিকা
কয়েকটি পত্রিকায়
নুরুল কাদেরের অস্ত্রগুলিসহ গ্রেফতারের ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন। এরকম বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার
(৭ জুলাই) বিকাল ৫টায় বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল ইউনিয়নের নাপোড়া-শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে চেয়ারম্যানের অস্থায়ী কার্যালয় ভাড়াটে দোকানে।
চেয়ারম্যানের বর্বরোচিত সাজানো ঘটানো থেকে মুক্তি পেয়ে নুরুল কাদের বৃহস্পতিবার ( ৮ জুলাই) বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে তিনি চরম আতংকে রয়েছে। চেয়ারম্যানের অযাচিত এই ঘটনার শিকার হয়ে তার স্ত্রী আছিয়া বেগম, ২ মেয়ে ও ৩ ছেলের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে।
এলাকা জুড়ে চেয়ারম্যানের এই সন্ত্রাসী ঘটনাকে সবাই চেয়ারম্যান জনপ্রতিনিধি হয়েও পূর্বের মত ডাকাতি পেশায় নেমেছে বলে মন্তব্য করেছেন। চেয়ারম্যানের ক্ষোভের কারণঃ সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ২ বছর আগে বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত ছিদ্দিক আহমদের সাথে নুরুজ্জামানের ছেলে আবু সামার ৩২ শতক বসত ভিটা নিয়ে বিরোধের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনা স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিনের কাছে বিচার চাইলে তিনি দুই পক্ষকে ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেন। ওই প্রেক্ষিতে নুরুল কাদেরও ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসা হয় কিন্তু দুই বছর ধরে নুরুল কাদেরের ৫০ হাজার টাকা ফেরৎ দিচ্ছেন না চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন। ওই টাকা খুঁজতে গেলে চেয়ারম্যান নুরুল কাদেরকে বেধড়ক পিটাতে থাকেন। গত দুই বছরে অন্ততঃ ৩ বার পিটিয়ে নুরুল কাদেরের হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে। নুরুল কাদের চেয়ারম্যানের ভয়ে ৮ মাস ধরে বাড়িতে যেতে পারেননি।
সর্বশেষে গত জুন মাসে নুরুল কাদের বাড়িতে গেলে চেয়ারম্যান তাকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দিলে তিনি চেয়ারম্যানের ভয়ে পৈত্রিক ৩২ শতক বাড়ি-ভিটা ছেড়ে পুঁইছড়ি ইউনিয়নের জঙ্গল নাপোড়া গ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকায় ভাড়াটে একটি ঘরে বসবাস শুরু করেন। চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন হাত ভেংগে দেয়ায় ভাংগা হাত নিয়ে গাড়ি চালাতে পারতেন না। বাঁশখালী প্রধান সড়কের শেখেরখীল বহদ্দারহাট রাস্তার মুখে তার বড় ছেলের ফার্ণিচারের দোকানে বসে থাকেন। ঘটনার দিন কী ঘটে ছিল ঃ গত বুধবার ঠিক সাড়ে ৩টা ।
বাঁশখালীর প্রধান সড়কের বহদ্দারহাট রাস্তার মুখে শতাধিক মানুষের সমাগম। ওখানে নুরুল কাদেরের বড় ছেলের ফার্ণিচারের দোকান। ওই ফার্ণিচারের দোকানের পাশে মো. আজমগীরের চা দোকান। ওই দোকানে বসে নুরুল কাদের চা পান করছিলেন। ওই সময় অর্তকিত চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন ৭/৮ জন লাঠিসোঠা নিয়ে নুরুল কাদেরকে পিটাতে পিটাতে দোকান থেকে বের করে। পরে সিএনজি অটোরিকশা করে ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নাপোড়া- শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে ভাড়াটে কয়েটি দোকানে স্থাপিত চেয়ারম্যানের অস্থায়ী কার্যালয়ে নুরুল কাদেরকে নিয়ে যায়। ওই সময় চেয়ারম্যানের সাথে ছিল ইকবাল, আলী হোসেন, ছগির, রিয়াজউদ্দিন, গাজাটি নুরুল কাদের। তারা তাকে বিকাল ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত কয়েক দফা পিটায়। ওখানে হাত-পা ভেংগে দিয়ে অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মুখে রাস্তায় বের করে। লোকজন দিয়ে হাতে একটি দেশিয় এলজি ও ৫ রাউন্ড গুলি দিয়ে ছবি উঠায়।
ওই ছবি চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিক ডেকে ছবিটি সাপ্লাই দেন। পরে চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলে যে, নুরুল কাদের চেয়ারম্যানসহ তার লোকজনকে গুলি করার সময় জনতা নুরুল কাদেরকে অস্ত্রগুলিসহ ধরেছে। আমি প্রাণে বাঁচতে পেরেছি এটাই শুকরিয়া। পরে চেয়ারম্যান লোকজন দিয়ে অস্ত্রগুলিসহ নুরুল কাদেরকে বাঁশখালী থানায় সোর্পদ করে।
পরে স্থানীয় জনতার দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার ( আনোয়ারা সার্কেল) হুমায়ন কবির, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবির, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মো. আজিজুল ইসলামসহ পুলিশের আরও অনেক দল দফায় দফায় তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত শেষে চেয়ারম্যানের সাজানো ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ গত বুধবার রাত ৩টায় নুরুল কাদেরকে থানা থেকে মুক্তি দেন।
এলাকাবাসীর বক্তব্যঃ
চা দোকানদার মো. আজমগীর, স্থানীয় বহদ্দার হাট জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মো. আব্দুর রহিম, ব্যবসায়ী আব্দুল করিম, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিদোয়ান বলেন, আমরা আজমগীরের চা- দোকানে ছিলাম। নুরুল কাদেরকে পিটানোর সময় আমরা চেয়ারম্যানকে অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান শুনেনি। তারা আরও বলেন, চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন ডাকাত ইয়াসিন নামে পরিচিত ছিল। অস্ত্র, হত্যা, ডাকাতিসহ বহু মামলার আসামী নৌকা প্রতীক পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। এখন সেই পূর্বের বর্বরতা দেখাচ্ছে। নিরহ মানুষকে অস্ত্রগুলি দিয়ে ধরিয়ে পুলিশে দিচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এই অস্ত্র কোত্থকে চেয়ারম্যান নুরুল কাদেরকে দিয়েছে তা তদন্ত করে চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবির বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের সোর্পদ করা নুরুল কাদেরকে আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সোর্পদ করার সময় তার সাথে দেয়া অস্ত্র গুলির ব্যাপারে কারা কারা জড়িত তদন্ত করে মামলা করা হবে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে অভিযোগ করা হলেও মামলা করা হবে।
সহকারি পুলিশ সুপার ( আনোয়ারা সার্কেল) হুমায়ন কবির জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শেখেরখীলের ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন বলেন, ‘ আমি অস্ত্রগুলিসহ ডাকাত ধরিয়ে দিয়েছি। আপনারা এসব ভালো কাজে সহযোগিতা না করলে ভাল কাজ করতে আমরা আগ্রহ হারাবো। ভাল কাজ করতে সহযোগিতা করুন।
বৃহস্পতিবার
৮
জুলাই ২০২১ ইং# সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত একুশে মিডিয়ার সংবাদ।
একুশে মিডিয়া.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
নিউজটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন ও শেয়ার করুন।
No comments:
Post a Comment