বাঁশখালী হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর ধর্ষক ব্যবসায়ী খোকন বড়ুয়া ধর্ষিতা গৃহবধূকে চরিত্রহীনা বলে কলংক রটাচ্ছে

মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম:

ধারের টাকা ফেরত দেয়ার অপরাগতায় এক দরিদ্র গৃহবধূ ১০ মাস ধরে এক ব্যবসায়ীর ধর্ষণের শিকার হয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স এ সন্তান প্রসবের পর নবজাতক শিশুকে রেখে ওই গৃহবধূ পালিয়ে যাবার পর ঘটনাটি প্রকাশ হয়েছে। নবজাতককে প্রশাসনের সহযোগিতায় দত্তক দিলেও ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাধারণ ডায়েরির পর বাঁশখালী থানা পুলিশ নবজাতকের মা’কে বাড়ি থেকে এনে গত সোমবার (২ আগষ্ট) রাতে ওই নবজাতককে গছিয়ে দিয়েছে। ধর্ষিতা গৃহবধূ কলংকের দায় এড়াতে এবং ধর্ষকের স্বজনদের চাপের মুখে নবজাতককে মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) ভোরে দত্তক দিয়ে দিয়েছে। এই নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষক ব্যবসায়ী খোকন বড়ুয়া প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং ধর্ষিতার নানামুখি কলংক রটিয়ে ধর্ষিতাকে অসহায় করে তুলছে। এই পার্শবিক ঘটনাটি ঘটেছে বাঁশখালী পৌরসভায় উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়া গ্রামে।

সরেজমিন ঘুরে বাঁশখালী পৌরসভার উত্তর জলদী বড়ুয়া পাড়ার স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, ধর্ষিতা গৃহবধূর দরিদ্র স্বামী ৮ বছর আগে মালয়েশিয়া গেছেন। বিদেশে গেলেও বাড়ীতে তেমন টাকা পয়সা পাঠাতে পারেন না। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার চালায় প্রবাসীর এই দরিদ্র গৃহবধূ। বেড়ার কুঁড়েঘরে তাদের বসবাস। ধর্ষিতা গৃহবধূ বলেন, প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় ধনাঢ্য মুদির দোকান ব্যবসায়ী খোকন বড়ুয়ার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ধার নিই। ওই টাকা ধার নেয়ার পর থেকে আমাকে খোকন বড়ুয়া নানা প্রলোভনে এবং চাপের মুখে দোকানে এবং আমার ঘরে এসে ১০ মাস ধরে ধর্ষণ করে আসছে। ওই কথা কাউকে বললে বড় ধরণের ক্ষতি করবে বলে ভয় দেখায়। এর মধ্যে গর্ভবর্তী হবার ঘটনা জানালেও সন্তান নষ্ট করে ফেলার চাপ দেয়। গত রবিবার ১ আগষ্ট বাঁশখালী হাসপাতালে রাত ৯টায় সন্তান প্রসব করলে হাসপাতালের এক আত্মীয় নার্সের কথামত সন্তানটি হাসপাতালে রেখে বাড়ি চলে আসি। তবে ওইদিন আমার আত্মীয় ওই নার্স হাসপাতালে ছিলেন না। পরে পুলিশ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে সন্তানটি গছিয়ে দেয়। আমি লোকলজ্জার ভয়ে তাকে দত্তক হিসেবে দিয়ে দিই।

বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, ‘হাসপাতালে উক্ত গৃহবধূ ভূমিষ্ঠ সন্তান ফেলে পালিয়ে যাবার পর থানায় জিডি করি। ওই জিডির প্রেক্ষিতে পুলিশের সহায়তায় সন্তানটিকে আবার মা’র কাছে সোমবার রাতে হস্তান্তর করেছি।’ স্থানীয় বাঁশখালী পৌরসভার কাউন্সিলর তপন বড়ুয়া বলেন, প্রবাসী গৃহবধূর সন্তান প্রসবের পিছনে জড়িত ব্যক্তিটি চিহ্নিত হয়েছে। ঘটনাটি কলংকিত ব্যাপার হওয়ায় বাঁশখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সমরঞ্জন বড়ুয়ার সহযোগিতায় লোহাগড়া উপজেলার পুঁটিবিলা গ্রামের ইতালি প্রবাসী সুমন বড়ুয়ার স্ত্রী কণিকা বড়ুয়াকে নবজাতকটি দত্তক হিসেবে দেয়া হয়েছে।’ তবে এই প্রতিবেদককে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সমরঞ্জন বড়ুয়াও সন্তানটি দত্তক প্রদানে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন।

বাঁশখালী থানার এস আই মো. মাসুদ বলেন ৮ বছর ধরে বিদেশে থাকা প্রবাসী স্ত্রী’র সন্তান প্রসবের ঘটনাটি কলংকিত ব্যাপার তাই সন্তান রেখে দরিদ্র গৃহবধূ হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে। পরে গৃহবধূকে সন্তানটি গছিয়ে দেয়া হয়েছে। গৃহবধূ লিখিত অভিযোগ না করায় আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।’ ধর্ষিতা গৃহবধূর অভিযুক্ত ব্যক্তি খোকন বড়–য়া বলেন, ‘ আমার সাথে ওই গৃহবধূর কোন যোগাযোগ ছিল না। ওই গৃহবধূর সাথে অনেক পুরুষের মেলামেশা আছে। নিজের চরিত্রহীনতা ঢাকতে আমার নাম বলছে।

আজ মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট ২০২১ইং) সম্পাদ্ক ও প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত একুশে মিডিয়া’র সংবাদ।

একুশে মিডিয়া.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউজটিতে আপনার মতামত কমেন্ট করুন ও শেয়ার করুন।