এম এ হাসান, কুমিল্লা:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অসহায় হত দরিদ্র পরিবারের মেধাবী এসএসসি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থীর পাশে এসে দাঁড়ালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মঞ্জুরুল হক,এসময় তিনি ঐ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।বাল্য বিয়ের অভিশাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে,দারিদ্র্যের শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎতের পথ জয় করে দৃপ্ত পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ইউএনও এস এম মঞ্জুরুল হকের মানবিক সহযোগিতা ওই শিক্ষার্থীর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে সকলেই মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।ইউএনও ব্যক্তিগত ফেইসবুক পোস্ট থেকে জানা যায় যে নিজের বাল্য-বিবাহ বন্ধের দাবি নিয়ে পরিবারের অজান্তে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে এসে উপস্থিত হয় ঐ শিক্ষার্থী।এসময় ঐ শিক্ষার্থী জানায় গরীব পরিবারের মেয়ে।যার কারণে তাদের সংসারে অভাব অনটন রয়েছে।ফলে তার পরিবার বাধ্য হয়ে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।এসময় ঐ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ দেখে ইউএনও নিজেই মুগ্ধ হয়েছেন।পরবর্তী সময়ে গুরুত্ব সহকারে শিক্ষার্থীর সকল কথা শুনলেন এবং সাথে সাথে বাল্য-বিবাহ বন্ধ করার শতভাগ আশ্বস্ত করে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষা উপকরণ প্রদান করেন এবং তাৎক্ষণিক তিনি ঐ শিক্ষার্থীর অধ্যায়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কল করে বেতন মওকুফ করেন।হতদরিদ্র এই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরনে সহযোগিতা প্রদান করে সামাজিক যোগাযোগ সাইটে প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও এস এম মঞ্জুরুল হক।নিন্মে এস এম মঞ্জুরুল হকের দেওয়া হুবহু পোস্ট টি তুলে ধরা হলো---
মাস দেড়েক আগের ঘটনা। হঠাৎ একটি মেয়ে আমার অফিসে ঢুকে সালাম দিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, স্যার একটা কথা বলতে চাই, সাহস দিলে বলবো। বললাম, নির্দ্বিধায় বলো কী বলতে চাও। তারপর বলে চললো; স্যার, আমি যে এখানে এসেছি আমার বাবা-মা কিন্তু জানে না। স্যার, আমি এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। .... স্কুলে পড়ি। আমার পরিবার খুব গরীব। আমার পড়ালেখা চালানোর সামর্থ্য তাদের নেই। তাই তারা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চায়। মেয়েটি খুব কাতর স্বরে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো। তারপর বললো, স্যার আমি এখন বিয়ে বসতে চাই না, আমি পড়ালেখা করতে চাই। আপনি আমাকে বাঁচান। বুঝতে অসুবিধা হলো না, পড়ালেখার প্রতি মেয়েটার প্রচণ্ড আগ্রহ আছে। রোল নাম্বার জানতে চাইলে বললো ০৮। তার মানে, নিঃসন্দেহে ভালো ছাত্রী। বললাম, তোমার বাবা-মা এখন তোমাকে বিয়ে দিতে পারবে না। সে দায়িত্ব আমি নিলাম। এরপর তারা তোমার বিয়ের উদ্যোগ নিলে আমাকে জানাবে। আমি তাদের সাথে কথা বলবো। তারপর তাকে বললাম, এখন তোমার জন্য কী করতে হবে বলো? তোমার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করণীয় আমি করবো। মেয়েটি তার হাতের লেখা একটা কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দিলো। বললো, স্যার স্কুলের বেতনটা মওকুফের ব্যবস্থা করে দিলে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবো। এ ফাঁকে বলে নিই, মেয়েটি যে স্কুলে পড়ে, আমি আবার পদাধিকারবলে সে স্কুলের সভাপতি! সাথে সাথে আবেদনের উপর লিখে দিলাম, "বেতন মওকুফ করা হলো"। তাৎক্ষণিক ফোন করে তা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দিলাম। তারপর বললাম, আর কী করতে হবে বলো? যদিও জানি, এমন দরিদ্র পরিবারের একটি মেয়ে, যার পিছনে তার পিতার একটি পয়সাও খরচ করার সামর্থ্য নাই, তাকে এ ধরনের প্রশ্ন করা অবান্তর। ওর আড়ষ্টতা দেখে বুঝলাম, বলতে চাইলেও হয়তো ওর সাহসে কুলাচ্ছে না। এরপর আমি নিজেই বললাম, তোমার পরীক্ষার ফি লাগবে না? বললো, স্যার লাগবে। আমি বললাম, তোমার পরীক্ষার ফি আমি দেবো। তোমার বই-খাতা-কলম যা যা লাগবে আমাকে বলো, আমি সব ব্যবস্থা করে দেবো। যখনি যা লাগবে আমার কাছ থেকে এসে নিয়ে যাবে। এরপর যা ঘটলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটির দু'চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলো। বললো, স্যার আপনার কাছ থেকে এতোটা সহযোগিতা পাবো ভাবি নাই। বললাম, কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালোমতো পড়ালেখা চালিয়ে যাও। তুমি তোমার বাবা-মাকে দেখিয়ে দাও, তুমি তাদের দায় নও, তাদের সম্পদ। দু'দিন আগে মেয়েটি অফিসে এসেছিলো। বললো, স্যার এসাইনমেন্টের জন্য কিছু কাগজ আর একটি জ্যামিতি বক্স দরকার। আমার স্টাফকে ডেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করে দিলাম। পড়ালেখা কেমন চলছে জানতে চাইলে বললো, ভালো। বিয়ের বিষয়ে বাবা-মা আর কিছু বলে কিনা জিজ্ঞেস করলে বললো, আপাতত বলে না। এরপর বললাম, ভালো করে পড়ালেখা করো, তোমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। সে "জ্বি স্যার" বলে এক বাক্স কাগজ আর জ্যামিতি বক্স নিয়ে সালাম দিয়ে বিদায় নিলো। এ ছোট বোনটি, যে কিনা পাহাড়সম প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে বাল্য বিয়ের অভিশাপ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে, দারিদ্র্যের চরম কষাঘাতকে জয় করে দৃপ্ত পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়, তার জন্য একরাশ শুভকামনা।
শুভকামনায়ঃ
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, চৌদ্দগ্রাম।
No comments:
Post a Comment