মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম:
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী
থানার সামনে বিশাল ফুলের বাগান, নানাজাতের ফুলের সৌরভ, পাখির কিচির-মিচির রব, স্তরে স্তরে সাজানো টবগাছ। এসব দেখে থানায় আসা কোন আগুন্তুকের মনে হবে না চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানা এক সময় দেশ-বিদেশে আলোচিত লোমহর্ষক ঘটনা বহুল ছিলো। মনস্তাত্তিক চিন্তাশক্তি ও মনোরম পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সৃষ্টি করে স্বার্থলোভী, দুস্কৃতিকারী, দাঙ্গাবাজ ও দাগি অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করে পরিবেশ শান্ত করে তুলেছেন ওসি কামাল। কোন্দলমুখি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদেরও নিয়ন্ত্রণ করে এলাকায় পরস্পর রেষারেষি স্থিমিত করে রেখেছেন।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দীন ইনসেস্ট থানা ভবন-ছবি: মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম
যার ফলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর যোগদানের পর এক বছরে বাঁশখালীতে নাশকতা, খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, দাঙ্গাহাঙ্গামা, জায়গা-জমির বিরোধ, মাদকাসক্তি এবং মাদক কেনাবেচা কমে গেছে। যুগ যুগ ধরে অশান্ত ডাকাত প্রবণ বাঁশখালী হঠাৎ শান্ত হওয়ায় নানা মহলে বাঁশখালী থানার ওসিকে নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। শান্তিপূর্ণ বাঁশখালী উপহার পেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা বাঁশখালীতে আসলেই, থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিনের সাথে এক পলক কৌশল বিনিময় করতে ভুলেন না। সুন্দর দীর্ঘদেহী পরিচ্ছন্ন এই মানুষটি সব সময় নিজের চরিত্রকে পরিচ্ছন্ন রাখতে মুখে পান সিগারেটও তুলেন না। মাদককে মনপ্রাণে ঘৃণা করে বাঁশখালীর আনাচে-কানাচে গিয়ে মানুষকে মাদক প্রতিরোধে উদ্ধুদ্ধ করতে সব সময় সভা-সমাবেশে ব্যস্ত থাকেন। কোন ঘটনা ঘটলেই নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েই মুখোমুখি হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পরিবেশকে শান্ত করে তোলা যেন তার নেশা। সেকারণে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, যুব-সমাজ এবং ব্যক্তির কাছে আলোচনার মুখপাত্র হয়ে ওঠেছেন ওসি কামাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিদিন একটা না একটা ঘটনা প্রবাহ নিয়ে প্রশংসায় ভাসেন তিনি।
বাঁশখালী থানা সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিগত এক বছরে পুলিশ ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছেন। সাজাপ্রাপ্ত, জিআর, সিআর মামলা মিলে ১ হাজার ২ শত ৩৯টি ওয়ারেন্টভুক্ত দাগী আসামীর ওয়ারেন্ট তামিল করেছেন। মাদকের মামলা করেছেন ১২৮টি, মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছেন ২১৮জনকে, ৩ লাখ ১০ হাজার ১২টি ইয়াবা, ১ হাজার ৩ শত ৮৯ লিটার চোলাই মদ এবং ৯ কেজি ৩৫০ গ্রাম গাজা উদ্ধার করেছেন। এছাড়া বির্তকহীন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নূন্যতম মারামারির ঘটনা ছাড়া বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, দুর্গাপূজা উদ্যাপন এবং মেগাপ্রকল্প গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এজন্য চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি’র স্বীকৃতি পান পর পর তিনবার ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস এবং ২০২২ সালের জানুয়ারী মাস । বর্তমানে ওই পুরস্কার পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে বন্ধ থাকায় কেউ পুরস্কার পাচ্ছেন না।
কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার বাসিন্দা ওসি মো. কামাল উদ্দিন বিবিএএমবিএ (একাউন্টিং) পাশ করে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন ২০০৭ সালে। ২০১৬ সালে প্রমোশন পেয়ে ইন্সপেক্টর হন। প্রথম ওসি হিসেবে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর বাঁশখালী থানায় যোগদান করেন। কেন বাঁশখালী দেশ-বিদেশে আলোচিত ?: ২০০৩ সালে বাঁশখালীর সাধনপুরে ১১ জন সংখ্যালঘুকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, ২০১১ সালে ৩১ জেলেকে সাগরে রশি দিয়ে বেঁধে হত্যা করা হয়, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরবর্তিতে বাঁশখালী আদালত, উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়, থানায় ভাংচূর করা হয়, ঘন ঘন ডাকাতি, জলদস্যুতা, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী ঘটনা, আওয়ামীলীগ-বিএনপির মধ্যে চর্তুমুখি দলীয় কোন্দল, ভয়ংকর নাশকতার ঘটনা, সাধনপুরে ২০১৫ সালে পাহাড়ে বিশাল জঙ্গি আস্তানা থেকে ৪ জঙ্গিসহ ব্যাপক অস্ত্র উদ্ধার, ২০২১ সালে দুর্গাপূজায় ১৫টি মন্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাংচূরসহ বিবিধ ভয়ংকর অপরাধ বাঁশখালী বার বার আলোচনায় থাকতো।ওসি- কামাল উদ্দীন
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাশক্তি ও ভালবাসা দিয়ে আইনি কাঠামো বাস্তবায়নে থানাকে মানুষের আশ্রয়স্থল বানিয়েছি। ভয়কেন্দ্র নয়। মানুষ যখন থানায় আসে প্রচন্ড ক্ষোভ, আক্রোশ, প্রতিশোধ, হিংসা এবং ধ্বংসাত্বক মন নিয়ে আসে। বিপদগামী মনকে কোমল ও পরিচ্ছন্ন করতে থানার সামনে নানা জাতের ফুলের বাগান করেছি। সুন্দর সুন্দর ফুল দেখে অনেক মানুষের মন পাল্টে যায়। কেউ অপরাধী হয়ে জন্ম নেন না, অপরাধীকেও সঠিক পথে নিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
No comments:
Post a Comment