স্টাফ রিপোর্টার:ই-একুশে মিডিয়া
বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের আলোচিত ও ২৭ মামলার আসামী চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা ১টি মামলায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। রিমান্ড মঞ্জুর শেষে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টায় আদালত চত্বরে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে ওঠার সময় হাতকড়া পড়া অবস্থায় চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী প্রকাশ্যে বাঁশখালী থানার ওসিকে লক্ষ্য করে দম্ভোক্তি দিয়ে বলেন, ওসি সাব আঁরে আনতে এইল্যা গাড়ি দিলে ১’শ মামলা দিলেও অসুবিধা নাই (ওসি সাহেব আমাকে আনতে এরকম বেশি গাড়ি দিলে ১শ মামলা করলেও অসুবিধা হবে না।) ।
পুলিশ জানায়, তাকে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারী ও ২৩ ফেব্রুয়ারী আরও ২টি পৃথক মামলায় রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য আদালতে আনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) ভোর থেকে বাঁশখালী আদালত চত্বর ও বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম জেলা ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর থেকে চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি ছিলেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জেলা পুলিশের প্রিজন ভ্যানের সামনে পিছনে ২টি পুলিশের গাড়ি যোগে সকাল ১১টায় বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাইনুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারী বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুলিশের ওপর হামলা, ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পৃথক ৩টি মামলায় ৭দিন করে আলাদা আলাদা রিমান্ড আবেদন করা হয়। ওই ৩টি মামলার মধ্যে বৃহস্পতিবার ( ১৬ ফেব্রুয়ারী) পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির তারিখ ধায্য ছিল। ওই শুনানিতে ম্যাজিষ্ট্রেট মাইনুল ইসলামের আদালত তার বিরুদ্ধে ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামী লিয়াকতের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধীতা করেন আইনজীবি ছিলেন নুরুল আবছারসহ অন্যান্যরা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. মাসুদ আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বালি নিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসার বিরোধে চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে পৃথক পৃথক কয়েক দফা হামলায় ৬ পুলিশসহ ১৩ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। সন্ত্রাসীরাও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। ওই ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারী ভোরে তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ছিল জেলা ডিবি পুলিশ। তাকে ওইদিন গ্রেফতারের আাগে পর্যন্ত পৃথক পৃথক ভাবে নয়জনকে হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন, নাশকতার ঘটনা, চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা ছিল। ৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পৃথক পৃথক ঘটনায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার পর ৯ ফেব্রুয়ারী রাতে এস আই লিটন চাকমা বাদি হয়ে পুলিশের ওপর হামলার অপরাধে তাকে প্রধান আসামী করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে হামলা মামলা, চাঁদা দাবির অপরাধে এস সিলভার হোয়াইট এসোসিয়েটস্ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জাহেদী হাসান বাদি হয়ে তাকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা এবং ডিবি পুলিশের এস আই হুমায়ন কবির বাদি হয়ে তাকে একমাত্র আসামি করে সক্রিয় এলজি ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধারের অভিযোগে অস্ত্র মামলাসহ পৃথক পৃথক ৩টি মামলা করায় সর্বমোট ২৭টি মামলার আসামি তিনি ।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, গন্ডামারার চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে আদালতে ৭ দিনের চাওয়া রিমান্ড আবেদনের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার ১ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছে। আরও ২টি মামলায় পৃথক পৃথক রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। তা পরবর্তীতে শুনানি হবে। আদালতে দম্ভোক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত চত্বরে চেয়ারম্যান লিয়াকতের দম্ভোক্তি সবাই শুনেছে, তা উর্ধত্বন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চেয়ারম্যান লিয়াকত যেভাবে আলোচিত ঃ বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী ও তার বাহিনীর নেতৃত্বে ১৮বার হামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সন্ত্রাসীদের হামলায় মোট ১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে অন্ততঃ ৩ শতাধিক। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকাদারি নিয়ে লিয়াকত আলী শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ।
জমি কিনেছেন অন্ততঃ ৭৫ একর। তাছাড়া ওই টাকা প্রকাশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাষ্ট্র বিরোধী বিক্ষোভে নিজে মিছিলে সম্মুখে উপস্থিত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে ব্যবহার করলে বাঁশখালীর আওয়ামীলীগ নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ ছিল। যা বাঁশখালীর রাজনৈতিক ইতিহাসে ছোট বড় সবার মধ্যে ছিল আলোচনার বিষয়। এছাড়াও গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান পলাতক আসামী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করে বক্তব্য দিয়ে আলোচিত ছিল এবং বাঁশখালীর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে টাকা দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিকাংশ স্কুলের সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সৃজনশীল প্রশ্নে ‘ তাঁর সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করে প্রশ্নপত্র করেছিল। ওই প্রশ্নপত্রের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার ১৩ জন শিক্ষক জেল কেটেছিল। এখনও মামলাটি চলমান। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে গত ২০১৭ সালের ২৫ মে চেয়ারম্যান পদে শপথ গ্রহণের পর ১ বারের জন্যও উপজেলা আইন শৃংখলা সভা ও উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থিত না থেকে চেয়ারম্যানি পদ বহাল রেখেছেন। এর পরবর্তীতে আবারো ২০২২ সালের ৪ আগষ্ট আবারো শপথ গ্রহণ করে গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। তারপরও বাঁশখালী উপজেলা সমন্বয় সভা ও আইনশৃংখলা সভায় উপস্থিত থাকেন না। রহস্য ঘেরা পলাতক লিয়াকতের ২৭টি মামলার কয়েকটি হচ্ছেঃ ১৯৯৪ সালে গন্ডামারার আবু তাহের ও ১৯৯৯ সালে গন্ডামারার নুরুল কবিরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল গন্ডামারার মর্তুজা আলী, মো. আংকুর. জাকের আহম্মদ ও জাকের হোসেনসহ ৪ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী মোহাম্মদ আলীকেও প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, ২০১৪ সালে ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইনের ১৯(এ) মামলা নং ১৭, ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন ( সংশোধিত ২০০২) এর ৩/৪ এর ধারায় মামলা। একুশে মিডিয়া’র সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment