স্টাফ রিপোর্টার:ই-একুশে মিডিয়া
বাঁশখালীর কাথরিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কাথরিয়া গ্রামে দীর্ঘদিনের জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলায় অন্ততঃ ৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে মো. সিরাজ নামের একজনের বাম হাতের কনুই কিরিচের কোপে কেটে দিয়েও সন্ত্রাসীরা ক্ষান্ত হয়নি, পুড়ে দিয়েছে ঘর-বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্থদের বাঁচাতে গেলে সন্ত্রাসীরা ইউপি সদস্য রফিক আহমদ চৌধুরীকেও ধাওয়া করেছে এবং গ্রাম পুলিশ কায়সারকেও পিটিয়েছে। অপরদিকে দফায় দফায় পুলিশ তদন্ত করলেও প্রতিপক্ষ বিভিন্ন মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে মহড়া দিয়ে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র পরিবারগুলো ঘর-বাড়ি যেতে না পেরে দিশেহীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে এবং থানায় দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাথরিয়ার পূর্ব কাথরিয়া গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা-জমির বিরোধ নিয়ে আব্দুল মালেক গ্রুপ ও মনির আহমদ গ্রুপের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এই নিয়ে উভয় পক্ষে বেশ কয়েকটি মামলাও আছে। আব্দুল মালেক গ্রুপ ১৮ শতক জায়গায় লোহার তার ও পাকা পিলার দিয়ে ঘেরাও করলে থানার এস আই আজিম তদন্তে গিয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মো. কায়সারকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী জায়গাটি তদারকির জন্য জিম্মায় দেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতেই ৩টায় মনির আহমদ গ্রুপ গ্রাম পুলিশ মো. কায়সারকে মারধর করে ঘেরা-বেড়া সব উঠিয়ে নিয়ে যায়। মো. কায়সার বাঁশখালী থানাকে খবর দেয়।
ওই মুর্হুতে আব্দুল মালেক গ্রুপ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে মনির আহমদ গ্রুপ কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে মো. সিরাজ (৪০) এর বাম হাতের কনুই প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আহত মো. সিরাজকে পুলিশ উদ্ধার করে প্রথমে বাঁশখালী হাসপাতালে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। গুরুতর আহত মো. সিরাজকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত থাকার সুযোগে মনির আহমদ গ্রুপের লোকজন ১৬ ফেব্রুয়ারী ভোর রাতে আব্দুল মালেকের দুই চাচার ঘর পুড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। আগুনে ইসলাম মিয়া ও নুরন্নবীর দুইঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, নগদটাকাসহ পুড়ে ১২ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারী দুপুরে পোড়া ঘরের সামনে এসে মনির আহমদ গ্রুপের লোকজন আবারো হামলা করে আব্দুল মালেকের চাচী ফিরোজা খাতুন, ভাইয়ের বউ সবাইকে প্রকাশ্যে পিটাতে থাকে।
এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক আহমদ চৌধুরী ও গ্রাম পুলিশ কায়সার ওদের বাঁচাতে গেলে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের ধাওয়া করে। থানায় দেয়া অভিযোগের বাদী আব্দুল মালেক বলেন, বিভিন্ন মামলার আসামী মনির আহমদ গ্রুপের লোকজন আমার চাচাত ভাই মো. সিরাজের হাতের কনুই কেটে দেয়ার পর আমরা হাসপাতালে ব্যস্ত থাকালে অন্যান্যদের ঘরের দরজায় ছিটকানি দিয়ে কেরোসিন ঢেলে আমার দুই চাচার ঘর-বাড়ি পুড়ে দিয়েছে। এমনকী ৯৯৯ এ ফোনের পর আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কাছে পৌঁছলেও সন্ত্রাসীরা আগুন নিভে গেছে বলে ফায়ার সার্ভিস টিমকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
বাঁশখালী থানার এস আই আজিম, এএসআই নজরুল ইসলাম, এএসআই রহিমসহ বিভিন্ন পুলিশ দফায় দফায় তদন্ত করেছেন। পুলিশ এসে চলে যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে আবারো নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা গরিব হওয়ায় এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, মনির আহমদ গ্রুপের তান্ডবে এলাকাবাসী অতিষ্ট। জায়গা-জমি মূলতঃ কাগজেপত্রে প্রমাণ হয়। কোনরুপ কাগজপত্র ছাড়া পেশি শক্তি ব্যবহার করে গরিব অসহায় আব্দুল মালেক গ্রুপের জায়গা তারা দখল করে আছে। এর জের ধরে উপর্যুপরি হামলা এবং ঘর-পুড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কথায় কথায় যেভাবে হামলা চলছে তাতে প্রশাসন জরুরী হস্তক্ষেপ না নিলে প্রাণহানিও হতে পারে। দুই পক্ষের ঘটনা আমি মীমাংসা করতে গিয়ে কয়েকবার ধাওয়াও খেয়েছি। গ্রাম পুলিশ মো. কায়সার বলেন, আমাকে থানা পুলিশ জিম্মায় দিয়েছিল বলে আমি জায়গায় ঘেড়া-বেড়া পাহারা দিয়েছিলাম। অথচ মনির আহমদ গ্রুপ আমাকে মারধর করে ঘেড়া-বেড়া লুট করে নিয়ে গেছে। মনির আহমদ গ্রুপ অন্যায় করেছে। ঘর-বাড়ি পুড়ে দিয়েও প্রকাশ্যে আস্ফালন করছে সবাইকে মেরে ফেলবে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পূর্ব কাথরিয়ার ঘটনাটি দীর্ঘদিনের জায়গা-জমির বিরোধের ঘটনা। পুলিশ কয়েকদফা তদন্ত করেছে। ঘর-বাড়ি কিভাবে পোড়া গেছে তা তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
No comments:
Post a Comment