রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ:ই-একুশে মিডিয়া
২০১২ সালে মাসিক ৫ হাজার টাকা সুদে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল লতিফুল আলম ওরফে শহিদুল। ওই টাকা দিয়ে সে একটি ইজিবাইক কিনেছিল। মৌখিক চুক্তিতে প্রথমে ৬ বছরে সুদে ব্যাবসায়ীকে তিন লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। পরে আরো দুই লাখ সহ মোট সাড়ে পাঁচ টাকা দিলেও তার হিসাবটি এখনো পরিশোধ হয়নি। উল্টো ফাদে ফেলে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া দু’টি ব্যাংক চেকে ৮ লাখ টাকার দাবিতে শহিদুলের মাথার উপরে চাপিয়েছে দুটি মামলা। সুদে কারবারী আনোয়ার হোসেনের সুদের জালে প্রতারনায় নিঃস্ব শহিদুল এখন বিচার পেতে জনপ্রতিনিধি সহ সাংবাদিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। উল্লেখ্য, আনোয়ারের টাকা লগ্নির সুদে জালে উপজেলার তৈলকুপ গ্রামের সলেমান বিশ^াস, একই গ্রামের নান্টু বিশ^াস ও পাইকপাড়া গ্রামের রং মিস্ত্রি ইমরান সহ অনেকেই স্বর্বস্ব হারিয়েছেন।
ভ’ক্তভোগী কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে শহিদুল জানায়, পেশায় সে একজন ইজিবাইক মেকার। ২০১২ সালে ইজিবাইক কেনার জন্য তার সৎ মামা উপজেলার ঈশ^রবা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের থেকে সুদে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিল। এরই বিপরিতে ২০১৮ সাল পর্ষন্ত তিন লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিয়েও রেহায় পায়নি শহিদুল। সে জানায়, ২০১৮ সালের আগষ্টে তার পিতা খোরশেদ আলম মারা যান। পিতার মৃত্যুর পরদিনই আনোয়ার এসে ওই ৮০ হাজার টাকার বাবদ অগ্রনী ব্যাংকের একটি চেক নিয়ে যায়। কিন্তু এর ৩ দিন পরই পূনরায় আবার আনোয়ার ও তার ভাইপো জিয়াউর এসে ওই চেক ফেরৎ দিয়ে একটি ব্লাংক চেক দাবী করেন। এতে সে রাজী না হলেও পরে তার বড় মামা মতিয়ার রহমানের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত একটি ব্লাংক চেক দেয়। যেটি তার বড় মামার কাছে দিলেও কৌশলে চেকটি হাতিয়ে নিয়েছিল আনোয়ার। এছাড়াও সম্পর্কে সৎ মামা হওয়ায় অবাধ যাতায়াতে সুবাদে আমার প্রতিষ্টানের ক্যাশ ড্রয়ার থেকে সোনালী ব্যাংকের আরো একটি চেক হাতিয়ে নিয়েছিল আনোয়ার। সেই দুটি চেক দিয়েই সুদে কারবারী আনোয়ার ও তার ভাইপো জিয়াউর ৮ লাখ টাকার দাবীতে শহিদুলের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ আদালতে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। এমন পরিস্থিতিতে মামলা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের স্বরনাপন্ন হন। তিনি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও আনোয়ারের একগুয়েমিতে শেষ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। শহিদুল আরো জানায়, সুদে কারবারীদের দুটি মামলা থেকে রেহায় পেতে পরবর্তীতে এক সামাজিক বৈঠক হয়। সেখানে শালিষের সিদ্ধান্তে মামলা তুলে নিবে মর্মে দু’দয়ে আরো দুই লাখ টাকা দেয়। এভাবে দফে দফে সে ৮০ হাজার টাকার বিপরিতে এ পর্ষন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েও রক্ষা পায়নি। উল্টো মামলার বোঝা টানতে হচ্ছে তাকে।
উল্লেখ্য, শহিদুলের মত আনোয়ারের সুদের জালে আটকে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলার তৈলকুপ গ্রামের সলেমান বিশ^াস সাংবাদিকদের জানান, বিশেষ প্রয়োজনে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে একটি সাদা ষ্টাম্পে সাক্ষর করে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এ সুযোগে আনোয়ার ওই সাদা ষ্টাম্পে ১০ লাখ টাকা লিখে মামলার ভয়ভীতি দেখায়। এর ১২ মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর জমি জমা বন্ধক রেখে সে ১০ লাখ টাকা দিয়ে রক্ষা পায়। একই গ্রামের নান্টু বিশ^াস সুদে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিল। শেষ অবধি জমি জমা বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা দিয়ে রক্ষা পেতে হয়েছে তাকে। পাইকপাড়া গ্রামের রং মিস্ত্রি ইমরান জানায়, ৩০ হাজার নিয়ে শেষ অবধি গরু বিক্রি করে ৫০ হাজার দিয়ে নিস্পত্তি করতে বাধ্য হয়েছে। এদের মত অনেকেই সুদে ব্যাবসায়ী আনোয়ারের জালে পড়ে স্বর্বস্ব হারিয়েছেন।
এসব বিষয়ে সুদে কারবারী আনোয়ার হোসেন জানান, যেহেতু টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তাই এ নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। এরপরও বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য অনুরোধ জানালেও তিনি কথা নাা বলে চলে যান।
আনোয়ার হোসেনের বড় ভাই মতিয়ার রহমান জানান, দু’জনই আমার কাছের মানুষ। ভাগ্নে শহিদুল বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছে। আমি ঘটনাটি মিমাংসার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য পযর্ন্ত ও গড়িয়েছে। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। তবে, আমার ভাই আনোয়ার হোসেন শহিদুলের উপর অন্যায় করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া সুদভিত্তিক অর্থ লেনদেন অবৈধ। সেটা ব্যক্তি অথবা সংগঠন যাই হোক। তবে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ যদি হেনস্থা বা প্রতারণার স্বিকার হয় তাহলে আবেদন করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। একুশে মিডিয়ার সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment