দিদার হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার:ই-একুশে মিডিয়া
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ও পুঁইছড়ি এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে রাতের আঁধারে পাহাড়ি গাছ কেটে কাঠ ইট ভাটায় নেওয়ার সময় জঙ্গল পুঁইছড়ি এলাকা থেকে কাঠভর্তি একটি ডেম্পার ট্রাক জব্দ পুকুরিয়ার ৫ নং ওয়ার্ডের পুরান ব্রিজঘাট এলাকায় শঙ্খ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার অপরাধে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত মেশিন ও যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে প্রশাসন।
৫ মার্চ (রবিবার)রাত আটটার দিকে রাতের আঁধারে উপজেলার পুঁইছড়ি এলাকার পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে বনের কাঠ ইট ভাটায় নেওয়ার সময় কাঠসহ ১টি ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন।উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্রেট খোন্দকার মাহমুদুল হাসান এর নেতৃত্ব মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়, এসময় অবৈধ ভাবে বনের কাঠ নিয়ে যাওয়ার সময় কাঠভর্তি ডেম্পার ট্রাক জব্দ করেছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী প্রশাসনিক টিম।এসময় পুঁইছড়ি এলাকায় সরকারি খাল থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের অপরাধে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত মেশিন ও যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বাঁশখালীতে যোগদানের পর থেকে বাঁশখালীর মানুষকে ভূমি হয়রানি থেকে রক্ষা ও পাহাড় এবং নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে একের পর এক জোরালো অভিযান পরিচালনা করলেও পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা ও বন কর্মকর্তাদের চরম অবহেলার কারণে নদী রক্ষা ও পাহাড়ি পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি।
বাঁশখালীর পুকুরিয়া, সাধনপুর, লটমনি,কালীপুর, গুনাগরী,জঙ্গল জলদি, জঙ্গল চাম্বল, নাপোড়া, পুঁইছড়িসহ পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে রাতদিন বনের গাছ কেটে ইট ভাটা ও কারাত মিলসহ বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র।কোটি কোটি টাকার পাহাড়ি মাটিও অবৈধ ভাবে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা।এভাবে বাঁশখালীর পাহাড় ও বনাঞ্চল ধ্বংস করার ফলে একদিকে প্রতিনিয়ত লোকালয় ঢুকে পড়ছে বন্যহাতি অপরদিকে চরম ভাবে ঝুঁকিতে পরিবেশ।
স্থানীয়দের দাবি, বন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজোশে পাহাড় সাবাড় করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র,বনের গাছ ও মাটি কেটে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করছে প্রভাবশালীদের বন কর্মকর্তারাও।ইদানিং পাহাড় ও বনের পরিবেশ ধ্বংস করে গাছ ও মাটি বিক্রি অবৈধ উপার্জন করার জন্যে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র সদস্যরা বন জঙ্গল আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে,আর বন কর্মকর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। জঙ্গল পুড়ে দেয়ার ফলে বন্যপ্রাণী শূন্য হয়ে গেছে বাঁশখালীর পাহাড়ি বনাঞ্চল।বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থল পাহাড়ি বনাঞ্চল,এই পাহাড়ি এলাকা প্রভাবশালীরা ধ্বংস করে দেয়ার কারণে বন্যহাতিরা প্রতিনিয়ত লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে, এতে বন্যহাতির আক্রমণে জীবন হারাচ্ছে অনেক মানুষ,এছাড়াও বনাঞ্চল আগুনে পুড়ার ফলে প্রাণীদের খাবার জুড়ছেনা,তাই লোকালয়ে ঢুকে ক্ষেতখামার ও চাষাবাদ নষ্ট করছে বন্যহাতিরা,এতে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনের এক কর্মকর্তা বলেন,পাহাড় কেটে সাবাড় করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র,ওই প্রভাবশালীরা প্রতিনিয়ত আমাদের স্যার আনিসুজ্জামান শেখ,রাজ্জাক স্যার ও রউফুল স্যারের সাথে যোগাযোগ করে থাকে।কিন্তু কেন যোগাযোগ করে সেটা জানিনা,পাহাড় মাটি ও বনের গাছ কেটে নেয়ার সময় আমরা বাঁধা দিলে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের লোকেরা স্যারদের সাথে ফোন করে দেয়,তখন স্যারেরা আমাদেরকে বলে ওইসব গাছ গুলো অমুক নেতার জন্যে।কখনো এমপির, কখনো মেয়রের আবার কখনো উপজেলা চেয়ারম্যানের,কখনো অমুক স্যারের লোক পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এছাড়াও সাধনপুর বিটের এক কর্মকর্তা বলেন, গুনাগরীসহ বিভিন্ন পাহাড়ের বন জঙ্গলে রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দেয় ও বনদস্যুরা,জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে গেলে তারা সেখান থেকে বড় বড় গাছ কেটে বিভিন্ন কারাত মিল ও ইট ভাটায় বিক্রি করে দেন এবং পাহাড় থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেন প্রভাবশালীরা,আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে এককালিন হিসেবে টাকা নিয়ে নেয়।তাই উর্ধতন কর্মকর্তারা বনদস্যু ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে কোনো কিছুই বলে না বরং আমরা মাঝে মধ্যে গাছ আটক করলে স্যারেরা আমাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশ্যান নিবে বলে হুমকিও দিয়ে থাকে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, গুনাগরীর পূর্ব পার্শ্বে বেশ কয়েকটি পাহাড়ে আগুনে পুড়ার দৃশ্য।
নাপোড়া-শেখেরখীল এলাকার কারাত মিলের কর্মচারী জানান,ভাই আমি মিলে চাকরি শুধু,এখন মিলের মালিক নেই,আপনারা যে গাছের কথা বলছেন সেই ব্যাপারে রেইঞ্জার আনিস স্যারের সাথে কথা বলেন,উনি সব কিছু জানে,এখানে সব মিল মালিকদের সাথে স্যারের সম্পর্ক আছে।শুধু পুঁইছড়ির মানুষ গুলো স্যারের সাথে বেঈমানী করে তাই আনিস স্যারেও ইতারারে ভরিদেয়।হয়েকদিন আগে একজনেরে ধরি চালান দিয়ে।
এব্যাপারে কালীপুর বিট কর্মকর্তা আতিকুল হক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পাহাড়ে আগুন দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,পাহাড়ে কে বা কারা আগুন দিয়েছে সেটা জানিনা,তবে বিষয়টি জানতে পেরে আমি পুড়ানো পাহাড়ি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি,কারা আগুন দিয়েছে সেটা বের করার জন্যে আমি বিষয়টি তদন্ত করতেছি এবং উর্ধতন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।যারা পাহাড়ে আগুন দিচ্ছে এবং পাহাড় ও বনাঞ্চল থেকে মাটি ও গাছ নিচ্ছে তাদের সাথে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা কথা, কেউ বলতে পারে কিন্তু তা সঠিক নয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান জানান,উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে পুরান ব্রিজঘাট এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শঙ্খ নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার অপরাধে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত মেশিন ও যন্ত্রপাতি শব্দ করে ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মনিরুদ্দিনের জিম্মায় দেয়া হয়েছে এবং পুঁইছড়ির জঙ্গল পুঁইছড়ি এলাকায় পাহাড়ি বনাঞ্চল থেকে বনের গাছ কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়ার সময় কাঠসহ ১টি ডেম্পার ট্রাক জব্দ করা হয়েছে।জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান মাহমুদুল হাসান।
এবিষয়ে রেইঞ্জার আনিসুজ্জামান শেখ এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এসিল্যান্ড যে গাড়ি ও কাঠ জব্দ করেছে এগুলো আমাদের দেখার বিষয় নয়,কারণ এই গাছ গুলো এলাকায় থেকে কাটা হয়েছে, কিন্তু কোন এলাকা থেকে কাটা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে ইট ভাটা মালিকরা নিয়ে যায়,এই গুলোও অবৈধ। বনদস্যু ও পাহাড় খেকোদের সাথে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজোশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এধরনে কোন প্রমাণ নেই,এটা মিথ্যা তথ্য,আপনার বনে যাইলে আমাদের ফরেস্টরের লোক নিয়ে যাইয়েন,তারা সব তথ্য আপনাদের দিতে পারবে।তাছাড়া পুঁইছড়ি এলাকাটি খুবই খারাপ,সেখানকার সব লোকই চোর আখ্যা দিয়ে আনিসুজ্জামান আরো বলেন, পুঁইছড়িতে প্রতিনিয়ত বিট কর্মকর্তাদের উপর হামলা হচ্ছে, বেশকয়েকটি মামলাও করেছি এমনকি গত কয়েকদিন আগে একজনকে আটক করে চালানও দেওয়া হয়েছে। একুশে মিডিয়া’র সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment