স্টাফ রিপোর্টার:ই-একুশে মিডিয়া
বাঁশখালীর পূর্ব জঙ্গল চাম্বলে হায়দারী পাড়ায় স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে লম্পটদের পিটুনি খেয়ে মারা গেলেন কৃষক মো. হাবিব উল্লাহ (২৮)। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাঁশখালী থানায় লাশ নিয়ে পৌঁছলে ওই সময় নিঃসন্তান হাবিবের স্ত্রী রোকসানা আক্তার বিলাপ ধরে বলেন, ‘ ও আল্লাহা’রে আঁই কাড়ে লই বাচ্চুম, আঁর ইজ্জততুনতো জামাইর জীবনের মূল্য বেশি আছিল। লম্পট অলোতুন আঁর ইজ্জত বাচাইতা যাই কেনে মরি গেলাগই। খুনি লম্পট অলর বিচার চাই। ( ও আল্লাহারে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো, আমার ইজ্জত থেকে স্বামীর জীবনের মূল্য বেশি ছিল। লম্পট থেকে আমার ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে কেনে মরে গেলা। খুলি লম্পটদের বিচার চাই।) সদ্য স্বামী হারানো রোকসানা আক্তারের গগণ বিদারী কান্নায় উপস্থিত মানুষদের চোখে মুখে কান্নায় এক শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
বুধবার (৩১ মে) দুপুরে ঘটনাস্থল তদন্ত করেন সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. কামরুল হাসান, বাঁশখালী থানার অফিসার (ওসি) মো. কামাল উদ্দিনসহ আরও পুলিশ দল। তাৎক্ষনিক নিহতদের পরিবার ও গ্রামবাসীর বক্তব্য অনুসারে ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দোস মোহাম্মদ (৩৫), আব্দুল কাদের বরাত (২৭) এবং সাকিব (২২) নামের ৩জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় নিহত হাবিব উল্লাহ’র লাশ পারিবারিক কবরে দাফন করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মো. হাবিব উল্লাহ একজন কাঁকরোল চাষী। তার কাঁকরোল ক্ষেতের পাশে দোস মোহাম্মদ, আব্দুল কাদের এবং সাকিবেরও কাঁকরোল ক্ষেত আছে। প্রতিদিন ভোরে হাবিব উল্লাহ’র ক্ষেত থেকে পুরুষ লিঙ্গের ভ্রণ ফুল সংগ্রহ করে স্ত্রী লিঙ্গের ভ্রণে সংযোজন ঘটায় উল্লেখিত চাষীরা। প্রতিদিন ভোরে হাবিব উল্লাহ কাঁকরোল ক্ষেতে যাবার আগেই তার স্ত্রী রোকসানা আক্তার যান। গত মঙ্গলবার (৩০মে) ভোর ৬টায় হাবিব উল্লাহ যাবার আগেই স্ত্রী রোকসান আক্তার গেলে তাকে ঝাপটে ধরে সাকিব ও আব্দুল কাদের শ্লীলতা হানির চেষ্টা করে। এর পর ওরা দোস মোহাম্মদকেও ডেকে নিয়ে আসে। স্বামী হাবিব উল্লাহ এসে তার স্ত্রীকে নির্যাতন করার দৃশ্য দেখে প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে দোস মোহাম্¥দ, আব্দুল কাদের এবং সাকিব দা’র পিছনের অংশ এবং লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেতলে দিলে হাবিবকে ব্যাপক মারধর করে। এই সময় স্ত্রী রোকসানা আক্তারকে কোলে করে এই লম্পটরা দূরে নিয়ে যাবার জন্য উদ্যত হলে হাবিব বেহুশ হয়ে পড়ে যায়। এই অবস্থায় ক্ষেতে থাকা বিষ হাবিবের মুখে ঢেলে দেয় ওরা। এই অবস্থায় রোকসানার গগণবিদারি চিৎকারে ক্ষেতে শ্বাশুড়ী হাফছা আক্তার, শ্বশুড় আব্দুল মজিদসহ গ্রামবাসী ছুটে এসে হাবিবকে দ্রুত বাঁশখালী হাসপাতালে নিয়ে যান। ওইখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে মঙ্গলবার রাত ১১টায় হাবিব উল্লাহ মারা যান।
নিহত হাবিব উল্লাহ’র স্ত্রী রোকসানা আক্তার বলেন, আমি খুনিদের বিচার চাই। আমার ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে আমার স্বামীকে পিটুনি দিয়ে লম্পটরা হত্যা করেছে। পরে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে। আমাকেও শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত-বিক্ষত করেছে ওরা। খুনিরা প্রচার করছে, আমার স্বামী কাঁকরোল চুরি করায় নাকি পিটুনি দিয়েছে। সেই অপমানে বিষপান করেছে। সবাইকে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করার অনুরোধ করছি।
সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি জোরালো তদন্ত চলছে। ঘটনা জানার সাথে সাথে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনসহ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
No comments:
Post a Comment