একুশে মিডিয়া, প্রতিবেদক:ই-একুশে মিডিয়া
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনটিতে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনৈতিক গ্রুপিং থাকলেও এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি।
এই আসনটিতে স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের বাহিরে ছিলো, এমন কি স্বাধীনতার পূর্বে নির্বাচনেও এই আসনে আওয়ামী লীগ জয় পায়নি। এই আসনে ১৯৯১ সালে নিএনপির সরকার গঠন করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট সুলতান উল কবির চৌধুরী নৌকা প্রতীকে বিজয় লাভ করলেও পরেবর্তীতে তিনি ১৯৯৬ সালে বিএনপির জাফরুল ইসলাম চৌধুরী কাছে পরাজয় হন, এর পর টানা তিন বার বিএনপি থেকে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচিত হন, সব মিলিয়ে এই আসনটি বিএনপি-জাতীয় পার্টির দখলে ছিলো, অবশেষে ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে টানা দুই বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
বাঁশখালীতে আওয়ামী নেতা কর্মীদের পূর্ব থেকেই দলীয় গ্রুপিং ছিলো দৃশ্যমান, তবে আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি প্রথম সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলীয় গ্রুপিং অনেকটাই ভাটা পড়ে। এই গ্রুপিং রাজনীতি ভাটা পড়ার মূলে উঠে আসে তৃণমূল পর্যায়ে নেতা কর্মীদের সাথে সাথে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর গড়ে তোলা সুসম্পর্ক। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকার পাশাপাশি টানা দুই বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করেছেন। যার ফলে তাঁর নির্বাচনী আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন তিনি। উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে জমি থাকলেও দীর্ঘদিন যাবৎ কোন অফিস না থাকা স্থানটি পূরুণ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের জমিতে দোতলা অফিস বা ভবন নির্মান করায় এই আসনের তৃণমূল পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের কাছে খুব প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে স্থান পেয়েছেন। এই আসনের বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়নেও রয়েছে তার অসাধারণ ভুমিকা। এই আসনে আগে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সুখে দুঃখের খবর নেতা ছিলো না, এখন সেটিও তিনি করে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রয়েছে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে। সাংগঠনিক দক্ষতায়, যোগ্যতায় এবং ভক্ত, অনুসারী ও সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় বার বার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির। এছাড়াও সংসদীয় কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র ও সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে সংগঠনিক শক্তি ও এলাকায় জনপ্রিয়তা বিবেচনায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী তৃতীয় বারের মতো নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী নেতা-কর্মীরা।
দলীয় সূত্র জানা যায়, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে গুনে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। তার নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী পরিবার অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। উপজেলা, ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন এবং এর আওতাধীন ১৩৫ টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কমিটি রয়েছে। এর বাহিরেও রয়েছে বিশাল আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠি।
তিনি বার বার নির্বাচিত হয়ে দলের আস্থা ধরে রেখেছেন। শুধু সাংগঠনিক ভীত নয়। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছেন এ সংসদ সদস্য। আসনটি থেকে জনগণের বিপুল ভোটে তিনি ২বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ এ সময় তিনি বাঁশখালী উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। বলা হয়- বাঁশখালী যা উন্নয়ন হয়েছে সবই মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর হাত ধরে। পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য মাটির সড়কও নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন সেতু, কালভার্ট, মসজিদ, মন্দির, ঘাট ও গ্রামিণ অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ ভবন, বাঁশখালী আদালত ভবন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা মডেল মসজিদ (নির্মাণাধীন), উপজেলা পরিষদ হলরুম, থানা ভবন, কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ভবন সহ বিভিন্ন উন্নয়ন করা হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে বেড়িবাধ। উপজেলায় ৯৯% বিদ্যুতায়ন হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০শয্যায় উন্নতিকরণ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমউনিটি ক্লিনিকে ভবনসহ সেবার মান উন্নয়নে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
যখন দলীয় প্রার্থী পরাজয় ও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার বাইরে ছিলো না, তখন এই আসনে দুই এক জনের বেশি দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার লোক ছিলো না, আজ যখন দল ক্ষমতায় ও টানা দুই দলীয় প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী টানা দুই বার বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন, তখনই সে আসনে ১৭জন মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, এই আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ পরিনিত করছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি।
বাঁশখালী পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দরা জানান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নৌকা মাঝি পেতে চান এবং নির্বাচনের প্রস্তুনিও তারা নিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরর্ম সংগ্রহ জমাকৃত অনেকই নির্বাচনী এলাকার মানুষ ত দুরের কথা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীও চিনেন না বলে জানিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর। কয়েক জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম ধরে তিনি বলেন, ‘এরা কারা? আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এদেরকে কখনো দেখিনি। অনেকের বাড়ি-ঘর কোথায় তাও জানি না। ১৭ জনের মধ্যে অনেকে কি উদ্দেশ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তা আমার বোধগম্য নয়।’
এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নামের তালিকা পেয়ে তাঁদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। অনেকের পরিচয় খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। গোয়েন্দা পুলিশের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘অনেকের বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। সাধারণত যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তাঁদের একটি ধারণা আমাদের কাছে থাকে। কিন্তু এবার অপ্রত্যাশীত অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় তাঁদের পরিচয় খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালানা বোর্ড থেকে পাওয়া তালিকায় দেখা গেছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
এ ছাড়া দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবুর রহমান, গ্রেনেড হামলা মামলার বাদী মেজর (অব) প্রকৌশলী শামসুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ড. জমির উদ্দিন সিকদার, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ কবির লিটন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছৈয়দুল মোস্তফা চৌধুরী রাজু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোসলেহ উদ্দীন মনছুর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ওমর গনি, এমইএস কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সরওয়ার আলম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন মোহাম্মদ জিয়া উদ্দীন ও চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির নেতা লায়ন শেখর দত্ত।
এদের বাইরেও সাইফুদ্দিন রবি, নাজমা আক্তার, মুজিবুর রহমান, আরেফ উল হক নামের চারজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালানা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সাকিব বলেন, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ১৭ জনের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতে না পেরে পরিচয় জানার চেষ্টা করেছিলাম। ওদের মধ্যে একজন প্রথম বাকিতে মনোনয়ন ফরম চেয়েছিলেন। পরে কিভাবে টাকা জমা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন। শুনেছি, তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নয়।
No comments:
Post a Comment