লেখক- খোরশেদ আলম, চেয়ারম্যান- বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ ও শ্রম বিয়ষক সম্পাদক- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে.এম দাশ লেইনে অবস্থিত ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন প্রাঙ্গনে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর অনুসারী মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পূর্ব পাতিল্পন আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে পাকিস্তান প্রথম বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই কমিটির সভাপতি মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সংগঠন ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সাংগঠনিক নাম পরিবর্তন করে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নাম একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে সুচিত ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে গণজাগরণে পরিণত হয়। অব্যহত রাজনীতির নিপিড়নে শিকার তরণি সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময় কারাআল্লালে থেকেও ভাষা আন্দোলনে প্রেরণাদাতা হিসেবে গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্ত ফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ শোচনীভাবে পরাজিত হয়। তারপরও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বঞ্চিত করা হয়। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৫৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রদেশে, প্রদেশে কোয়ালিশন মন্ত্রী সভা গঠিত হয়। পূর্ব বাংলা আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত করে একযুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা আনুষ্ঠানিক মর্যাদা লাভ করেন। ২১ই ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হয় শহীদ দিবস ও ছুটির দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। মাত্র ২০ মাসের পরিচালনার সুযোগ পেয়ে চরম খাদ্যাভার ও দুর্ভিক্ষ থেকে জাতিকে রক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার যে সফলতা অর্জন করে তাতে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। সেই সময় মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে জনগণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তৃনমূল পর্যায়ে সংগঠন গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এরপর আইয়ুব খানের স্বৈরাশাসন বিরোধী আন্দোলনের এক দশক '৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন '৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, '৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা '৬৯ এর গণঅভুত্থান ছয় দফা ভিত্তিক '৭০ এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম খ্যাত কালজয়ী ভাষণ ও পরবর্তীতে পাকিস্তান দুঃশাসনের বিরদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সর্বাত্বক অসহযোগ আন্দোলন, ২৫' মার্চ কালরাত্রে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর '২৬ মার্চ এর প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃতে বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। অবশেষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ২ লক্ষ মা- বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভ্যুদ্বয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলদেশের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের সর্ববৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৮ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান ও প্রাদ্ধ দ্বিজাতি ভত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা অতঃপর বাঙালির জাভির উপর পশ্চিম পাকিলড্রন শাসক গোষ্ঠীর চরম অবহেলা, দুঃশাসন ও নিষ্পেষণ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার পর এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নেমে আসে জুলুম অত্যাচার ও নির্যাতন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ বছর নির্বাসনে থেকে অবশেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নব উদ্যমে সংগঠতি হয় জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যপড় আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ, শক্তির উৎস সংগঠনের তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা, দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনের সাহসী ঠিকানার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলার জনগণের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনগণের ভিতর থেকে উদিত একটি প্রগতিশীল সংগ্রামী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সমাজের অগ্রসর চিন্তা, চেতনা, আদর্শ ও লক্ষ্য কর্মসূচী বাস্তবায়নে অগ্রবাহিনী। নেতাকর্মীদের ইস্পাত দৃঢ় মনোবল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হলে আওয়ামী লীগের বিরদ্ধে কোন গড়যন্ত্র সফল হয়নি কোনদিন হবেও না। আওয়ামী লীগের নেতকর্মীরা আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। দীর্ঘ ৭২ বহরের লড়াই সংগ্রামের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। '৭৫ পরবর্তী কখনো খুনি মোড়ক, জিয়া এরশাদ ও খালেদা জিয়ার স্বৈরাশাসনের বিরাদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রামের অন্যতম পুরোধা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃকর্মীদের উপহাস। করে অনেকেই বলতেন আওয়ামী লীগ করিও না, ১০০ বছরও এই দল ক্ষমতায় যাবে না। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যায় ২১ বছর আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেন এঁর অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতা এদেশের জনগণ বিশ্বাস করে। শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সংকট জয় করে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বদানকারী সংখান নীতি, আদর্শ, চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বাঙালির হৃদয়ে দেশপ্রেমে বহ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত করে সংকট জয়ের ঐকাবদ্ধ মুক্তির আহ্বান জানাই। আওয়ামী লীগ, নৌকা, বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে হোসেন শহীদ সহরোয়াদী, মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরন্স ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচ.এম কামার জামানসহ ১৫ আগষ্ট জাতির পিতার সাথে নিহত সকল শহীদ এবং বৈশ্বিক মহামারী করোনায় আক্রাড় হয়ে যেসকল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
No comments:
Post a Comment