একুশে মিডিয়া, ডেস্ক:
সাড়ে তিন বছর আইনি লড়াই শেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র পদ ফিরে পেয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করার আট দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। চেয়ারে বসতে এখন বাকি শুধু শপথ গ্রহণ। আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নগর পিতার আসনে বসলে জনগণের জন্য কী করবেন, তা নিয়ে কালবেলাকে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ডা. শাহাদাত।
তিনি বলেন, আদালতের রায়ের পর আমাকে মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে
এখন আর কোনো জটিলতা দেখছি না। বর্তমানে শারদীয় দুর্গাপূজার কারণে সরকারি ছুটি চলছে। আশা করছি, বন্ধের পর আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রক্রিয়া (প্রসেসিং) শুরু করেছেন। প্রসেসিং শেষ হলেই শপথ গ্রহণের আয়োজন করা হবে।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোন কাজটির প্রতি গুরুত্ব দেবেন—এমন প্রশ্নে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরী একটি অপরিচ্ছন্ন শহরে রূপ নিয়েছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হারও দিন দিন বাড়ছে। তাই চট্টগ্রাম নগরকে ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটিতে রূপান্তরে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নগরীর আরেকটি বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিয়ে প্রকল্প চলমান আছে। প্রকল্পগুলো যাতে দ্রুত শেষ করে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
চসিকের সঙ্গে বাকি সব সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতা কাটানোর বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, গণপূর্ত, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনসহ (কেজিডিসিএল) সব সেবা সংস্থার সমন্বয় রেখে আমি কাজ করব। না হলে নগরীকে উন্নয়নে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য আমার প্রথম কাজই হবে সব সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় সভার আয়োজন করা। নগরবাসীকে যেন তার প্রাপ্য সেবা প্রদান করতে পারি।
গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফল বাতিল করা হয়। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শাহাদাত হোসেন ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন। এজাহারে তিনি নির্বাচন-পরবর্তী ফল সংক্রান্ত প্রকাশিত গেজেট (রেজাউল করিমকে মেয়র ঘোষণা করে) বেআইনি, অবৈধ ও ন্যায়নীতির পরিপন্থি বলে দাবি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে চসিক মেয়র ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের আগে সিটি করপোরেশনের মেয়রের শপথ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আবার গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যেই সরকারকে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একই বছরের ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন। ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি শপথ গ্রহণ করেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে ফল বাতিল করা হয়। এরই মধ্যে সাড়ে তিন বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে। ডা. শাহাদাত দায়িত্ব নিলে এক বছর পাঁচ মাসের মতো সময় পাবেন।
এদিকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিটি করপোরেশনে অনুপস্থিত ছিলেন মেয়র রেজাউল করিম। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে রেজাউল করিমকে অপসারণ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাড়ে তিন বছর আইনি লড়াই শেষে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন আদালত। তবে এর আগেই দেশের সব সিটির মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসকদের দায়িত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন পরিস্থিতিতে শাহাদাত কীভাবে ও কবে শপথ নেবেন এবং তার মেয়াদ হবে কত দিন, তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সার্বিক বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি
No comments:
Post a Comment