একুশে মিডিয়া, প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের বাঁশখালী -আনোয়ারা সীমান্তবর্তী শঙ্খ নদীর উপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতুর অবৈধ টোল বন্ধের দাবিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল, সর্বশেষ কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট তোপের মুখে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভারত চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পরই এসেতুর টোলমুক্ত ঘোষণা করে উৎসক ছাত্র-জনতা।
তৎপরবর্তী সময়ে তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল স্থায়ী ভাবে বন্ধ রাখার দাবিতে নানা কর্মসূচিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি প্রদান করেছে ছাত্র-জনতারা। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল বক্সের সামনে প্রধান সড়কের উপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিকালে প্রশাসনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জসিম উদ্দিন, আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ হোসেন। এতে জামায়াত-বিএনপি, বাঁশখালীর বাস, ট্রাক ও অটোরিক্সা সিএনজি মালিক-শ্রমিক সংহঠনের নেতৃত্ববৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শাখাওয়াত জামান দুলাল, যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (চট্টগ্রাম জজ কোর্ট) এডভোকেট শাওকত ওসমান, ডা. মোস্তাফিজর রহমান, এডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম, এডভোকেট মুজিবল হক, জাহেদুল হক (জাহেদ),বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী চট্টগ্রাম বাঁশখালী উপজেলা শাখার আমীর ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল মোস্তফা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দক্ষিণ জেলা নেতা মোক্তার হোসাইন সিকদার, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সদস্য মোঃ নিজাম উদ্দিন, বাঁশখালী বাস মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক নুরুল হক, চট্টগ্রাম, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চকরিয়া সড়ক যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আমির হোসেন সাদু, সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল হক জাবেদ, বাঁশখালী অটোরিক্সা সিএনজি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনীতিক, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাসহ বিভিন্ন সামাজিক, মানবিক, শ্রমিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, শঙ্খ নদীর উপর নির্মিত আরও পাঁচটি সেতু নির্মাণ পরবর্তী সময় থেকে টোলমুক্ত থাকলেও একমাত্র তৈলারদ্বীপ সেতুতেই টোল আদায় করে আসছিল, এই সেতুতে টোল আদায়ের মাধ্যমে যে সরকার তেমন রাজস্ব পাচ্ছে তা নয় বরং তৎকালীন আওয়ামী স্বৈরশাসকের আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টোল ইজারার নামে অবৈধ ভাবে টোল আদায় করে আসছিল। পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ইচ্ছে মতো টোল আদায় করতো তারা। তৈলারদ্বীপ সেতুতে অবৈধ টোল আদায় করতে গিয়ে ইজারাদার কতৃপক্ষের হাতে পরিবহন শ্রমিকরা নানা হেনস্তার শিকার হয়েছে যাহা খুবই দুঃখজনক। এছাড়াও যানজট সৃষ্টি করে টোল আদায় করার ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগান্তির শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ। কর্ণফুলী সেতুতে মোটরসাইকেল থেকে কোন ধরনের টোল দিতে হয়না কিন্তু তৈলারদ্বীপ সেতুতে ইজারাদাররা আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে প্রতিটি মোটরসাইকেল থেকেও ১০ টাকা করে টোল আদায় করতো।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র -জনতার গণবিপ্লবে তৎকালীন আওয়ামী সরকার পতনের পর ছাত্র-জনতারা এসেতু টোলমুক্ত ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগের কথিত প্রেতাত্মারা পুনরায় টোল আদায় করার পায়তারা চালাচ্ছে। এসেতুতে পুনরায় টোল প্রক্রিয়া চালু করা মানে ছাত্র-জনতার রক্তার্জিত গণবিপ্লবকে বিবর্জিত করার শামিল। সুতরাং তৈলারদ্বীপ সেতু স্থায়ীভাবে টোলমুক্ত করে পরিবহন শ্রমিকদের হয়রানি মুক্ত করা ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করতে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসনের কাছে এই গণশুনানি মঞ্চ থেকে জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী ও পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
No comments:
Post a Comment