একুশে মিডিয়া, ডেস্ক:
ভোরের কুয়াশা ভেজা পিচ্ছিল মাটিতে নগ্ন পায়ে কাজে ব্যস্ত বাঁশখালীর সাগর উপকূলীয় পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামের শামসুদ্দিন। সঙ্গে আছেন পিতা রাজা মিয়া।
দিন গড়িয়ে দুপুরে মাথার ওপর সূর্যের কড়া তাপ থাকলেও বসে থাকার উপায় নেই এই লবণ চাষীদের।
পারিবারিকভাবে লবণ চাষে জড়িত ৪০ বছর বয়সী শামসুদ্দিন।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ পেশায় রয়েছেন তিনি। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের শেষদিকে শুরু হয় লবণ মাঠ তৈরির কাজ। উৎপাদন চলে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক রেখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে লবণ উৎপাদনের এ কর্মযজ্ঞ।
লবণ চাষীরা জানান, সাগরের লবণাক্ত পানি দিয়েই উৎপাদিত হচ্ছে লবণ। কাঠের রোলার দিয়ে মাঠ সমতল করার পর চারপাশে মাটির আইল দিয়ে ছোট প্লট আকৃতির জায়গা তৈরি করা হয়। এরপর ছোট প্লটগুলো রোদে শুকিয়ে কালো বা নীল রঙের পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়। জোয়ার এলে মাঠের মাঝখানে তৈরি করা নালা দিয়ে জমির প্লটে জমানো হয় সাগরের পানি। অনেকে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিনও ব্যবহার করেন। এভাবে পানি সংগ্রহ করার পর ৪ থেকে ৫ দিন রোদে রাখা হয়। কড়া রোদে পানি বাষ্পীভূত হয়ে চলে যায় আর লবণ পড়ে থাকে পলিথিনের ওপর।
লবণ চাষ মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। শীতের কুয়াশাও লবণের জন্য ক্ষতিকর। উৎপাদিত লবণ থেকে পানি সরে গেলে ব্যাপারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই লবণ কিনে নিয়ে কারখানায় রিফাইনারি মেশিনের মাধ্যমে পরিশোধন শেষে বস্তা বা প্যাকেটভর্তি করা হয়।
বাঁশখালীর গণ্ডামারা, ছনুয়া, সরল, বড়ঘোনাসহ অধিকাংশ সাগর উপকূলীয় এলাকায় মাঠের পর মাঠজুড়ে চলছে পলিথিন বিছিয়ে লবণ উৎপাদন। প্রতিদিনই নজর রাখতে হচ্ছে পলিথিন ছিদ্র হয়ে গেল কিনা। ছিদ্র হওয়া মাত্রই পরিবর্তন করে দিতে হয় পলিথিন।
লবণ চাষী সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, মাঠ থেকে সংগ্রহ করা লবণ ব্যাপারীদের মাধ্যমে পৌঁছে যায় প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এরপরই লবণে আয়োডিন মিশিয়ে করা হয় বাজারজাত।
গণ্ডামারা এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আবু আহমদ বলেন, বাঁশখালীতে যে লবণ উৎপাদন হয় তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বাইরেও রপ্তানি করা যাবে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলাসহ ৪৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাঁশখালীর লবণচাষিদের উৎপাদিত লবণের কদর অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি। বাজারে এখানকার লবণের বেশ চাহিদা রয়েছে।
চলতি মৌসুমে লবণের দাম তুলনামূলকভাবে ভালো থাকার কারণে বাঁশখালী এলাকার ৩৫ হাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ীরা খুশি। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি লবণ ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি প্রতিমণ লবণ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সহায়তার অভাবে মিল মালিক ও মহাজনরা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে লবণ কিনে তা পরে উচ্চমূল্যে বাজারজাত করছেন। বিসিক (বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র) ও লবণচাষিদের তথ্য অনুযায়ী, বাঁশখালী ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪৫ হাজার একর জমিতে ৩৫ হাজার লবণচাষি লবণ উৎপাদন করছেন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদিত হতে পারে।
বিসিক বাঁশখালী উপজেলার কর্মকর্তা আনসারুল করিম জানান, বাঁশখালী ও কক্সবাজারে এবার চাহিদার চেয়ে ২ লাখ টন লবণ বেশি উৎপাদন হতে পারে। বর্তমানে বাঁশখালীতে প্রায় ২৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment