মুহাম্মদ দিদার হোসাইন:
মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণকারী অকুতোভয় সশস্ত্র সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদসহ বিভিন্ন গেজেটে নাম থাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এ্যাডভোকেট মুজিবুল হক।
১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে সম্মুখ যুদ্ধে সশস্ত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সূর্যসন্তান মজিবুল হক, সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী তাঁর সহকর্মীরা সরকারি তালিকাভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ -সুবিধাভোগ করলেও অদৃশ্য কারণে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাননি তিনি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ার কথা থাকলেও নানা বৈষম্যের কারণে অদ্যবধি পর্যন্ত সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না করায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত রয়েছেন এমুক্তিযোদ্ধা।
চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার (অর্থ) বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মুজিবুল হক মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সম্মুখযোদ্ধা, এসংক্রান্তে যাচাই -বাছাই তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম, কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদসহ একাধিক ডকুমেন্টস থাকা সত্বেও কি কারণে সরকারি গেজেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি সেটা জানেনা এ মুক্তিযোদ্ধারাও। তবে মুজিবুল হক যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সেটি যেখানেই গিয়ে বলতে হয় এবং স্বাক্ষী দিতে হয় সেখানেই স্বাক্ষী দিবেন বলেও জানান কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক।
উপজেলার অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা মজিবুল হক কে মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকলেও স্বাধিনতার ৫৩ বছরে এসেও কাগজে-কলমে তাঁর স্বীকৃতি মেলেনি। বর্তামানে আইন পেশার সাথে জড়িত আছেন তিনি। তাঁর সহকর্মী যোদ্ধারা সরকারী গেজেটে অর্ন্তভূক্ত আছে। তিনি কেন গেজটভুক্ত হতে পারেননি, কমজিবুল হক চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের মরহুম ওবাইদুল হকের পুত্র।
মজিবুল হক জানান, ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি সরাসরি সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ বাঁশখালী থানাধিন পুকুরিয়া ইউনিয়নে কমান্ডার মরহুম শফিকুল ইসলামের অধীনে আমিসহ আমরা সর্বমোট ৩৩ জন যুবক সরাসরি সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি এবং বাঁশখালী থানায় আমরাই সর্বপ্রথম পুকুরিয়া ইউনিয়ন হানাদার মুক্ত করি। তৎপরবর্তী আনোয়ারা এবং সাতকানিয়া থানায়ও আমরা সরাসরি সশস্ত্রযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমি বাঁশখালী থানার অর্ন্তগত পুকুরিয়া ইউনিয়নের কুন্ডুরাম পাহাড় এবং চা-বাগান এলাকায় ৩০৩ রাইফেল পরিচালনায় সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর কমান্ডার মরহুম শ্রদ্ধেয় শফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ১ নম্বর সেক্টরের অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করি। আমাদের অধিনায়ক কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। আমার সহযোদ্ধারা সবাই গেজেটভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু আমি বৈষম্যের শিকার, অদৃশ্য কারণে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থেকে আমি বঞ্চিত হয়েছি।
মজিবুল হক আক্ষেপ করে বলেন, মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশকে হানাদারমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে শত্রুমুক্ত করা সত্ত্বেও এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রমাণাদি সরকারী দপ্তরে জমা দেওয়া সত্ত্বেও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অদ্যাবধি পর্যন্ত আমাকে প্রদান করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের সমাপ্তিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী এর স্বাক্ষরক্রমে দেশরক্ষা বিভাগ হতে আমার বরাবরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ ইস্যু করেন।
ইতিপূর্বে দুই দুইবার মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন জমা দেওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় হতে অদৃশ্য কারণে হ্যাঁ বা না কোন জবাব অদ্যাবধি তাঁকে প্রদান করা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাওয়ার বিষয়টিকে বড় করে দেখছিনা, জীবনের ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু পেতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন মুজিবুল হক।
No comments:
Post a Comment