একুশে মিডিয়া, ডেস্ক:
চট্টগ্রাম জেলায় ৩৭৩টি ইটভাটার ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪২৮ টাকা। তবে চলতি ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে মাত্র ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪ টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৭ শতাংশ। ফলে ৭৩ শতাংশ খাজনা বকেয়া রয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাটার ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে অগ্রগতির চিত্রে চরম বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। কিছু উপজেলায় শতভাগ খাজনা আদায় হলেও অনেক উপজেলায় এক টাকাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলাভিত্তিক ইটভাটার সংখ্যা ও খাজনা আদায়ের চিত্র:
রাঙ্গুনিয়া: ৭০টি ইটভাটা, দাবি ৫,৩৯,২০০ টাকা; আদায় শূন্য।
সাতকানিয়া: ৫৩টি ইটভাটা, দাবি ১০,৭৪,৫৬৭ টাকা; আদায় শূন্য।
ফটিকছড়ি: ৪৩টি ইটভাটা, দাবি ১০,৪৫,০০৪ টাকা; আদায় ৫৪,৯৩২ টাকা।
হাটহাজারী: ৩২টি ইটভাটা, দাবি ৬,৬৭,৫০০ টাকা; আদায় ৪,৮৪,৫০০ টাকা।
রাউজান: ৪৭টি ইটভাটা, দাবি ২,৬০,৩০০ টাকা; আদায় ৩৪,২০০ টাকা।
সীতাকুণ্ড: ৮টি ইটভাটা, দাবি ৬,৩৯,২৭৯ টাকা; আদায় শতভাগ।
মিরসরাই: ১৪টি ইটভাটা, দাবি ২,১১,৬৮০ টাকা; আদায় ১৩,৩০০ টাকা।
বোয়ালখালী: ২টি ইটভাটা, দাবি ২২,১৭৯ টাকা; আদায় শূন্য।
কর্ণফুলী: ৮টি ইটভাটা, দাবি ৬৮,০০০ টাকা; আদায় ৪০,০০০ টাকা।
চন্দনাইশ: ৩২টি ইটভাটা, দাবি ৪,৭০,৭৬৪ টাকা; আদায় ৩৪,০০১ টাকা।
লোহাগাড়া: ৪২টি ইটভাটা, দাবি ৫,০৫,৪৪০ টাকা; আদায় ৪৩,৪০৯ টাকা।
বাঁশখালী: ৪টি ইটভাটা, দাবি ১,২৮,৩৯৫ টাকা; আদায় শূন্য।
সন্দ্বীপ: ১৬টি ইটভাটা, দাবি ২,৪৪,৬৪০ টাকা; আদায় ১,৮৫,৪৩৩ টাকা।
আনোয়ারা: ২টি ইটভাটা, দাবি ১৮,৪৮০ টাকা; আদায় শূন্য।
খাজনা আদায়ে জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ:
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জেলা সমন্বয় সভায় ইটভাটার ভূমি উন্নয়ন কর দ্রুত আদায়ের জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তাদের বকেয়া আদায়ে আরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, "অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
সমস্যার কারণ ও সমাধানের উদ্যোগ:
জেলা প্রশাসনের মতে, কিছু উপজেলায় খাজনা আদায় না হওয়ার কারণ হলো ভূমি কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাব এবং ইটভাটা মালিকদের অসহযোগিতা। বিশেষত রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া ও বাঁশখালী উপজেলাগুলোর ইটভাটায় এক টাকাও আদায় না হওয়া প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
উপজেলায় বৈষম্যপূর্ণ চিত্র:
সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৮টি ইটভাটা থেকে দাবিকৃত ছয় লাখ ৩৯ হাজার ২৭৯ টাকার সম্পূর্ণ অর্থ আদায় করা সম্ভব হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। তবে রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও সাতকানিয়ার মতো এলাকায় কোনো অর্থ আদায় না হওয়া কার্যক্রমে অসংগতি তুলে ধরেছে।
পরবর্তী পরিকল্পনা:
জেলা প্রশাসন চলতি বছরের শেষ নাগাদ সব বকেয়া খাজনা আদায়ের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সঠিক হিসাব নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপসংহার:
চট্টগ্রামের ইটভাটা থেকে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রশাসনের আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। বকেয়া আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ এবং অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
No comments:
Post a Comment