ওসমান হোসাইন, কর্ণফুলী প্রতিনিধি:
যেখানে বর্তমান সমাজ ব্যক্তি স্বার্থ আর ভোগবিলাসের প্রতিযোগিতায় মত্ত, সেখানে কিছু মানুষ আছেন যারা নিঃস্বার্থভাবে সমাজ ও মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তেমনই এক আলোকিত মানুষ হলেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার হাজি মোহাম্মদ ফারুক। তিনি কেবল একজন সফল ব্যবসায়ী নন, বরং একজন প্রকৃত সমাজসেবক, শিক্ষা অনুরাগী এবং মানবতার পথিক। সমাজের উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রাস্তা নির্মাণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
এক পারিবারিক ঐতিহ্য: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মানবসেবা:
হাজি মোহাম্মদ ফারুকের পরিবার শুরু থেকেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও মানবসেবায় নিবেদিত। তার দাদা, হাজি আবদুর রহমান, সহর আলী মুন্সি জামে মসজিদের জন্য ৮৭ শতক জমি দান করেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি। শুধু জমি দানই নয়, তাদের পরিবার যুগের পর যুগ মসজিদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে আসছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে হাজি মোহাম্মদ ফারুক মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মতওয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারে তার পিতা হাজি তোফাজ্জল আহমদ ‘মঈনিয়া রহমানিয়া দাখিল মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এককভাবে ১০ শতক জমি দান করেন। শুধু জমি দানই নয়, তিনি ভবিষ্যৎ ব্যয় নির্বাহের জন্য মাদরাসার নামে একটি ফিক্সড ডিপোজিট করে যান, যা থেকে এখনও মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মাদরাসার নাম পরে পরিবর্তন করে “মঈনিয়া রহমানিয়া দাখিল মাদরাসা” রাখা হয়। বর্তমানে হাজি মোহাম্মদ ফারুক মাদরাসার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং মাদরাসার উন্নয়নে সবসময় সহায়তা করে যাচ্ছেন।
শিক্ষা খাতে অনন্য অবদান:
হাজি মোহাম্মদ ফারুক মনে করেন, শিক্ষাই একটি সমাজের উন্নতির মূল চাবিকাঠি। সেই লক্ষ্যে তিনি শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন।
তিনি মধ্য ইছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৪ শতক জমি দান করেছেন, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জায়গার অভাবে যখন ভবন সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, তখন তিনি স্বেচ্ছায় এই জমি দান করেন। ফলে, বর্তমানে বিদ্যালয়ে আধুনিক ৩ তলা বিশিষ্ট সাইক্লোন সেন্টার/বিদ্যালয় ভবন নির্মিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করবে। ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে তার মাতার নামে “হাজি হোসনে আরা ভবন”।
শুধু এটুকুই নয়, তার পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার দাদার নামে একটি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। খুব শিগগিরই “হাজি তোফাজ্জল আহমদ কিন্ডারগার্টেন স্কুল” নির্মাণের কাজ শুরু হবে, যা এলাকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি আরও শক্তিশালী করবে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নে অগ্রদূত:
শুধু ধর্মীয় ও শিক্ষা খাতে নয়, হাজি মোহাম্মদ ফারুক এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে তিনি এবং তার পিতা নিজেদের জমির ওপর দিয়ে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করেন। বর্তমানে ১০০-১৫০টি পরিবার এই রাস্তা ব্যবহার করে প্রতিদিন মসজিদ, বিদ্যালয় ও দৈনন্দিন কাজে যাতায়াত করছে। এই রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে তার পিতার নামে- “হাজি তোফাজ্জল আহমদ সড়ক”।
তিনি বিশ্বাস করেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি। তাই তিনি ভবিষ্যতেও এ ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে নিজেকে যুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সমাজসেবায় তার অবদান চিরস্মরণীয়:
হাজি মোহাম্মদ ফারুক কেবলমাত্র একজন সফল ব্যবসায়ী নন, তিনি এক অনন্য মানবসেবক। তার পরিবার দীর্ঘ প্রজন্ম ধরে সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে তার অবদান সমাজে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি কোনো কিছু পাওয়ার আশায় দান করেন না, বরং সমাজের মানুষের কল্যাণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যান। যত ষড়যন্ত্রই হোক, তার অবদান কখনো মুছে ফেলা যাবে না। যুগ যুগ ধরে তার এই মহৎ কর্ম মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা:
হাজি মোহাম্মদ ফারুক আমাদের সমাজের জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তার দানশীলতা, শিক্ষা-অনুরাগ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং মানবসেবার প্রতি অবিচল অঙ্গীকার আমাদের শেখায়- প্রকৃত সম্পদ হলো মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া। তার এই মহৎ উদ্যোগ ও অবদান কেবল বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।
এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবন আমাদের শেখায়, সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন সম্ভব, যদি আমরা সবাই দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসি। হাজি মোহাম্মদ ফারুকের মতো মহৎ হৃদয়ের মানুষরা যুগে যুগে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং মানবতার আলো ছড়িয়ে দেয়।
তার স্বপ্ন ও বার্তা:
একুশে মিডিয়া প্রতিবেদকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাজি মোহাম্মদ ফারুক বলেন,
❝আমি সবসময় বিশ্বাস করি, মানুষের প্রকৃত সফলতা শুধু নিজের উন্নতিতে নয়, বরং সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার মধ্যেই নিহিত। শিক্ষা হলো জাতির আলো, আর মানবসেবা হলো এক মহৎ দায়িত্ব। তাই আমি চেষ্টা করেছি আমার সাধ্য অনুযায়ী শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের উপকারে আসতে। আমার পরিবার যুগের পর যুগ এই পথেই চলেছে, আমি শুধু সেই ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করছি।❞
তিনি আরও বলেন, ❝আশা করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসবে এবং সমাজের জন্য কিছু করবে। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করে, তাহলে আমাদের সমাজ আরও সুন্দর ও আলোকিত হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানুষের সেবা করার তৌফিক দান করুন।
No comments:
Post a Comment