এইচ. এম. শহীদ, পেকুয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনায় ইউপি সদস্য হোসাইন শহীদ সাইফুল্লাহর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (৮ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষের সশস্ত্র হামলায় নারী ও শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে ১৬ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইউপি সদস্য হোসাইন শহীদ সাইফুল্লাহর প্রতিপক্ষ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র হামলাকারীদের সমবেত করে এবং একত্রিত হয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। এ ঘটনায় ইউপি সদস্যের সমর্থকদের ওপর হামলা হলে নারী ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৬ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- ১। আমির হোসেন (২৫), ২। রুবি আক্তার (৪৭), ৩। জাকের হোসেন (৪৫), ৪। ওবায়দুল হোসেন (৭০), ৫। আজমগীর মানিক (৪৩), ৬। কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আলী মর্তুজা (২৪), ৭। আবদুল গনি (৪৫), ৮। দিলুয়ারা বেগম (৬০), ৯। দশম শ্রেণির ছাত্রী শিফা আক্তার রিমা (১৭), ১০। জাকের হোসেন (৫০), ১১। আবুল কালাম (৫৫), ১২। শারমিন আক্তার (৪০), ১৩। রমিজ আহমদ (২০), ১৪। ইউসুফ (২২), ১৫। ফাতেমা বেগম (৪৮), ১৬। শহর আলী (৩৫)। আহতদের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার পর এলাকা জুড়ে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ মিছিল:
ঘটনার জেরে নতুনঘোনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলাকারীরা ইউপি সদস্যের সমর্থক সিকদার, শহর আলী ও ইউসুফ-কে টেনে-হিঁচড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হামলার প্রতিবাদে বিকেলে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ঘটনার কারণ ও স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য স্থানীয়দের দাবি, জায়গা-জমি নিয়ে ইউপি সদস্য হোসাইন শহীদ সাইফুল্লাহ ও তার প্রতিপক্ষ মাহমুদুল করিম, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুল হক গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে গত কয়েকদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
ঘটনার দিন বিকেলে মাহমুদুল করিম ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একাধিক সশস্ত্র লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয় এবং ইউপি সদস্য সাইফুল্লাহর বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালানোর পাশাপাশি তার সমর্থকদের ওপর হামলা করে।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য
ইউপি সদস্য হোসাইন শহীদ সাইফুল্লাহ বলেন, "আমি বাড়িতে ছিলাম না। প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে, এরপর অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমার আত্মীয়-স্বজন বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। আমার তিনজন আত্মীয়কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়।"
সাইফুল্লাহর স্ত্রী রীনা করিম বলেন, "আমার স্বামী নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়িতে থাকেন না। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়িতে হামলা চালায় এবং টাকার পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।"
প্রশাসনের বক্তব্য
পেকুয়া থানার এসআই আপ্যায়ন বড়ুয়া বলেন, "ঘটনার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি এবং হাসপাতালে পাঠাই। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।"
পেকুয়া থানার ওসি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, "দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" বর্তমানে নতুনঘোনা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
No comments:
Post a Comment